• মেসি কাণ্ডের জের! রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা অরূপ বিশ্বাসের...
    ২৪ ঘন্টা | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিধানসভা ভোটের আর মাত্র ছ'মাস বাকি। ইতোমধ্যেই SIR নিয়ে রাজ্য-সহ দেশ উত্তাল। বাংলায় SIR (SIR in Bengal)-এর খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়েছে আজই। তাতে কার নাম আছে আর কার নাম নেই, সেই নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। কারণ এই তালিকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের।

    আর এই ভোটের আগেই রাজ্য সরকারের মন্ত্রীসভায় ঘটে গেল বড়সড় বদল। গত শনিবার আর্জেন্টিনার সুপারস্টার ফুটবলার লিও মেসি (Leonel Messi) কলকাতা সফরে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিল আরও তিন জায়গায় তাঁর সফর। মুম্বই, হায়দ্রবাদ ও দিল্লি। সবকটি অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে হলেও কলকাতার অনুষ্ঠানে (Messi Massacre in YBK) ঘটে যায় বিরাট বিপর্যয়। জনাকয়েক লোকজন মেসিকে ঘিরে রাখে। আয়েজক শতদ্রু দত্ত-সহ (Shatadru Dutta) ক্রীড়ামন্ত্রী ও কিছু প্রভাবশালী লোকজন সারাক্ষণ মেসিকে এমনঙাবে ঘিরে রাখে যে, দর্শকরা কোনওভাবেই মেসিকে দেখতে পায়নি। হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও স্বপ্নের রাজপুত্র লিও মেসিকে না দেখতে পাওয়ায়, এককথায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। বোতল ছোড়া, চেয়ার ভাঙা, বারপোস্টের জাল ছিড়ে দেওয়া-সহ বিভিন্ন গুণ্ডামি চলতে থাকে স্টেডিয়ামে। মাঠে ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Aroop Bisaws)। 

    এই ঘটনার পর, লিওনেল মেসির সফর ঘিরে শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যে কেলেঙ্কারি ঘটল, তাতে নীল-সাদা জার্সিধারী মেসিভক্তদের চার্জশিটে যদি প্রথম অপরাধী হন প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত, তা হলে দ্বিতীয় নামটি অবশ্যই রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। যিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’ এবং রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ও যুব কল্যাণমন্ত্রী। ২০২১ সালে নির্বাচলে জিতে তিনি রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলেন। যুব কল্যাণ সচিবকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। 

    মেসির ইভেন্টে চরম অব্যবস্থার জন্য ডিজি রাজীব কুমারকে শোকজ করেছে রাজ্য সরকার। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমারকে ওই শোকজ নোটিসের জবাব দিতে হবে। পাশাপাশি ওই শোকজের তালিকায় রয়েছেন আরও ৩ আধিকারিক।

    ঘটনার দিন অর্থাত্ ১৩ ডিসেম্বর সল্টলেক স্টেডিয়ামে অব্যবস্থার জেরে ওই অনুষ্ঠানে আসতেও পারেনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ঘটনার জেরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় গোটা দেশে। তার পরই ঘটনার তদন্তে মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে রেখে এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়ে দেন। সেই তদন্ত কমিটি রাজ্যে উচ্চপদস্থ ৪ আধিকারিককে শোকজ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন ডিজি রাজীব কুমার, বিধাননগরের সিপি, রাজ্যের স্পোর্টস সেক্রেটারি। পাশাপাশি, আরও ২-৩ জন বিসিএস অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। ঘটনার দিন ওই সব আধিকারিকদের কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখতে ৪ আইপিএসকে নিয়ে একটি সিট গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে রয়েছেন পীয়ূস পাণ্ডে, জাভেদ শামিম, সুপ্রতীম সরকার ও মূরলীধর শর্মা। ফলে গোটা ঘটনায় সরকার যে একেবারে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেছে তা একেবারে স্পষ্ট।

    যুবভারতীতে মেসি ছিলেন মেরেকেটে ১৬ থেকে ১৮ মিনিট। সেই সময়ের মধ্যেই অরূপ জনতার কাঠগড়ায়। দিন যত গড়িয়েছে, ততই মোবাইলে মোবাইলে ঘুরতে শুরু করেছে মেসির গায়ে লেপ্টে-থাকা অরূপের ছবি। যুবভারতীয় গ্যালারি ছাড়িয়ে দলের অন্দরেও সমালোচিত হতে শুরু করেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। বেলা যত গড়াতে থাকে, ততই যুবভারতী কেলেঙ্কারির ভয়াবহতা আরও প্রকাশ্যে আসতে থাকে। দেশজ তো বটেই, বিদেশি সংবাদমাধ্যমও কলকাতা শহরকে কাঠগড়ায় তুলে তুলোধনা করতে শুরু করে। তখন থেকেই প্রশাসনের অন্দরে জল্পনা তৈরি হয়, অরূপকে কি তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে? অনেকে বলেন, অরূপ কি পদত্যাগ করবেন?

    আর এই জল্পনার মধ্যেই আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন  এবং সূত্রের খবর মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন কি না বিবেচনা করেছেন। তৃণমূলের মুখসচিব কুণাল ঘোষ তাঁর সমাজ মাধ্যমের পাতায় এই খবর জানিয়েছেন।

    কেন এই ইস্তফা? (Why Aroop Biswas resigned)

    শনিবার যুবভারতীতে মেসির ইভেন্টে যে মহাবিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তার জন্য আয়োজকদেরই প্রাথমিক ভাবে দায়ী করেছিল সরকার। কিন্তু পরে সরকার ও শাসক দলের নেতারা স্পষ্ট বুঝতে পারেন, ইভেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তর তুলনায় সাধারণ মানুষের উষ্মা ও অসন্তোষ অনেক বেশি ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপর। তিনি সেদিন মেসির সঙ্গে লেপ্টে ছিলেন। শুধু নিজে নন, মাঠে থাকা আমলা, সচিব, সেলিব্রিটিদের ধরে ধরে মেসির সঙ্গে ছবি তুলিয়েছেন তিনি। যার জন্য দলের মধ্যেই অনেকে তাঁকে ‘ছবি বিশ্বাস’ বলে কটাক্ষ করছেন। বস্তুত শনিবার দুপুর থেকে এই ইস্তক সোশাল মিডিয়ায় যাবতীয় সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন অরূপ।

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচন হওয়া অবধি এউ ক্রীড়ামন্ত্রক তাঁর অধীনেই থাকবে।

    তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতার কথায়, মানুষের ক্ষোভ ও হতাশা আরও বেড়ে গেছে মেসির হায়দরাবাদ ও মুম্বইয়ের ইভেন্ট দেখে। মানুষ শুধু মেসিকে চোখ ভরে দেখেননি, রীতিমতো উপভোগ করেছেন। আর সেই দৃশ্যের সঙ্গে বার বার তুলনা চলে এসেছে যুবভারতীর। জাতীয় স্তরে তো বটেই আন্তর্জাতিক স্তরেও যুবভারতীয় ঘটনায় মুখ পুড়েছে কলকাতা তথা বাংলার। 


    দলের কালীঘাট ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, যুবভারতীতে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক তৃণমূল বা সরকার ছিল না। কিন্তু অরূপের কারণেই গোটা দায় এসে পড়ে সরকারের ঘাড়ে। তাই দেরিতে হলেও অরূপকে ইস্তফা দিতে বলা হয়। যাতে মানুষের উষ্মা ও অসন্তোষ কিছুটা হলেও প্রশমিত করা যায়।

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)