এত দিন গ্রামাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের রুজিরুটি ছিল ১০০ দিনের কাজ বা মনরেগা (MGNREGA)। সেই প্রকল্পেই এ বার কোপ বসাতে চলেছে মোদী সরকার? লোকসভায় পেশ হওয়া নয়া ‘জি রাম জি’ বিল নিয়ে এমনই আশঙ্কায় উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। এরই মধ্যে এই বিলকে ‘মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের অপমান’ এবং ‘গরিবের পেটে লাথি’ বলে তীব্র নিন্দা করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবারই লোকসভায় পেশ করা হয়েছে ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) বিল, ২০২৫’ বা সংক্ষেপে ‘জি রাম জি’ বিল। রাহুলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’টি জিনিসকে সবথেকে বেশি ঘৃণা করেন— মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ এবং গরিব মানুষের অধিকার। আর মনরেগা বাতিল করে ‘জি রাম জি’ বিল আনা, সেই বিদ্বেষেরই প্রতিফলন।
রাহুল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, মনরেগার বিকল্প জি রাম জি হতে পারে না। কারণ দুই প্রকল্পের ভিত্তিটাই আলাদা। তিনি জানিয়েছেন, মনরেগা প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের অধিকার, গ্রামের নিজস্ব উন্নয়ন কাজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা এবং মজুরি বাবদ ১০০ শতাংশ খরচ ও উপকরণের ৭৫ শতাংশ খরচ কেন্দ্র বহন করবে— এই নীতির উপর ভিত্তি করে।
এই প্রকল্পকে রাহুল লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ মানুষের ‘লাইফলাইন’, বলেছেন। দাবি করেছেন, কোভিড মহামারীর সময়ে গরিবদের আর্থিক রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছিল এই প্রকল্প। এ বার জি রাম জি প্রকল্প এনে এই প্রকল্পটিকে ধ্বংস করতে চাইছেন মোদীজি। কারণ জি রাম জি বিল এনে গ্রামের স্বশাসনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করাই মোদী সরকারের লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য নতুন বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, জি রাম জি প্রকল্পের বেতন ও উপকরণ বাবদ খরচের ৪০ শতাংশই বহন করতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে। এই নিয়ে শুধু বিরোধী দলগুলি নয়, তেলুগু দেশম পার্টির মতো NDA শরিকও তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।
রাহুল গান্ধীর দাবি, এই ক্ষেত্রে বাজেট, কী কাজ করা হবে, নিয়মকানুন— সবই ঠিক করবে কেন্দ্র। মনরেগায় যেমন গ্রামের মানুষই ঠিক করতেন, গ্রামের উন্নয়নের জন্য কী কাজ করা হবে, সেই বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আর থাকবে না।
সেই সঙ্গে এই বিল পাশ হলে রাজ্যগুলির উপরে বিশাল আর্থিক বোঝা চাপবে বলেও অভিযোগ করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, বাজেটের টাকা ফুরিয়ে গেলে ফসলের মরসুমেও মাস দুই কর্মহীন অবস্থায় থাকতে হবে গ্রামীণ জনতাকে।
সরকারের দাবি, ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’-এর লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে বিরোধীদের প্রশ্ন, এ বার গ্রামের গরিব মানুষের রোজগারেও আঁটসাঁট হচ্ছে কেন্দ্রের রাশ?