সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের ট্রলারে ধাক্কা মেরেছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ! ওই ঘটনায় ১১ জন মৎস্যজীবী কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। এখনও পাঁচজন নিখোঁজ। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। এদিকে নামখানায় ফিরে আসা এক মৎস্যজীবী বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশি নৌবাহিনী কেবল ট্রলারে ধাক্কাই মারেনি, তার আগে এক মৎস্যজীবীর দিকে বল্লমও ছুড়েছিল!
মৎস্যজীবী সইফুদ্দিন শেখের অভিযোগ, “বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ যখন ট্রলারের খুব কাছাকাছি আসে, তখনই আমাদের লক্ষ্য করে ওই জাহাজ থেকে বল্লম ছোড়া হয়। ট্রলারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মৎস্যজীবী রাজদুল আলি শেখের গায়ে ওই বল্লমের আঘাত লাগে। সে রক্তাক্ত অবস্থায় জলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়।” আরেক মৎস্যজীবী রাজীব দাস বলেন, “ভারতীয় জলসীমাতেই মাছ ধরছিলাম। সেখানে ঢুকেই বাংলাদেশ নৌবাহিনী অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালায়। কোনওরকম আগাম সংকেত বা বার্তাও আমাদের দেওয়া হয়নি।” উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবী রাখাল দাস বলেন, “ভারতের জলসীমার মধ্যে থেকেও বাংলাদেশ নৌবাহিনী আমাদের উপর হামলা চালাল। আমরা ১১ জন ফিরলেও পাঁচজন ফিরতে পারল না। তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।”
ভারতীয় জলসীমায় কীভাবে বাংলাদেশি নৌবাহিনী ঢুকে পড়তে পারে? কেন এই হামলা? সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিকভাবে ওই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করছেন, বল্লম দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে! ওই মৎস্যজীবী নিখোঁজ। তাহলে কি ওই ঘটনা দুর্ঘটনা নয়, হামলা? ওই মৎস্যজীবীকে কি তাহলে খুনের উদ্দেশ্য ছিল? একাধিক প্রশ্ন এই মুহূর্তে মাথাচাড়া দিচ্ছে। মৎস্যজীবী হরবন্ধু দাস বলেন, “সোমবার ভোর চারটে নাগাদ নোঙর তুলে ভারতীয় জলসীমার মধ্যেই কিছুটা দূরে গিয়ে জাল পেতে ফিরে আসছিলাম। তখনই আলো নিভিয়ে ভারতীয় জলসীমাতে ঢুকেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ আমাদের ধাওয়া করে। ইচ্ছে করেই আমাদের ট্রলারে ধাক্কা মারে। জাহাজের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে গেলে আমরা গভীর সমুদ্রে ভাসছিলাম। রূপবতী ট্রলার মাঝি-সহ আমাদের ১১ জনকে উদ্ধার করে ওই ট্রলারে তুলে নেয়।”
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার হয়েছে। অন্যান্য ট্রলারের মৎস্যজীবীরা সেটিকে চরে টেনে নিয়ে আসছেন। এরপর জল থেকে তুলে ট্রলারের ভিতর নিখোঁজ পাঁচজনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হবে। নিখোঁজ পাঁচ মৎস্যজীবীর নাম মতি দাস, রাজদুল আলি শেখ, সঞ্জীব দাস, দিলীপ দাস ও রঞ্জন দাস। তাঁরা প্রত্যেকেই কাকদ্বীপের বাসিন্দা। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর থেকেই উদ্বিগ্ন। বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। বাড়ির লোক ফিরে আসুক। এমন প্রার্থনা চলছে। ট্রলারের মাঝি রাখাল দাসকে উদ্ধার করা হয়েছি। শারীরিক অবস্থার পরে অবনতি হলে তাঁকে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।