• অন্য মন্ত্রীদের ঘেরাটোপে জি রাম জি বিল পেশ শিবরাজের, তুমুল বিক্ষোভ
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: মহাত্মা গান্ধী নারেগা (আ‌ইন) বাতিলের লক্ষ্যে ‘বিকশিত ভারত জি-রাম-জি’ বিল পেশ নিয়ে মঙ্গলবার উত্তাল হল লোকসভা। ‘গান্ধীজি আমাদের হৃদয়ে রয়েছেন’ বলে মন্তব্য করে মহাত্মার নাম বাদের বিষয়টি ম্যানেজ করার মরিয়া চেষ্টা করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তবে পালটা গান্ধীজির ছবি হাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, এনসিপি (এসপি), আরএসপি সহ বিরোধী দলের সব সাংসদ নেমে এলেন ওয়েলে। স্লোগান উঠল, নো। বিজেপি বেঞ্চ থেকে উঠল জয় শ্রীরাম। তবুও বিরোধীদের বিক্ষোভে বেগতিক বুঝে বেশি সময় ব্যয় করলেন না শিবরাজ। 

    ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিটেই ধ্বনিভোটে বিলটি পেশ করিয়ে নিলেন। প্রতিবাদের পারদ চড়তে থাকায় স্পিকার ওম বিড়লাও এক ঘণ্টার জন্য সভা মুলতুবি করে দিলেন। কংগ্রেস সহ বিরোধীরা সভার বাইরেও বজায় রাখল প্রতিবাদ। গান্ধীজির ছবি হাতে সংসদ চত্বরে হল মিছিল। আজ, বুধবার দেশজুড়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। সূত্রে খবর, বিলটি শেষমেশ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোরই ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। কারণ, শুক্রবার বেলা ১২ টাতেই অনির্দিষ্টাকালের জন্য মুলতুবি হ঩বে অধিবেশন। ফলে লোকসভা, রা঩জ্যসভায় বিলটি পাশ করানোর সময় কোথায়? 

    এদিন সকাল থেকেই শিবরাজ ছিলেন স্নায়ুচাপে। বিদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ‘বিকশিত ভারত-গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীন) বিল ২০২৫’ (সংক্ষেপে ভিবি- জি-রাম-জি) পেশ করলেও শিবরাজ মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না। বেলা ১১-৫৬ মিনিটে শিবরাজ লোকসভায় আসেন। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বললেন, আপনার নিজের আসনেই বসুন। কিন্তু ফ্যাকাশে মুখে তিনি ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিলেন, না। বিরোধীদের প্রতিবাদের মাত্রা যদি তুমুল হয়, সেই আশঙ্কায় নিজের আসন ছেড়ে বসলেন অন্যত্র। বসলেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পিছনের আসনে। সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু, শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিংদের মতো সহকর্মী মন্ত্রীদের ঘেরাটোপে। 

    বেলা ১২-০৬ মার্শালের থেকে চাইলেন এক গ্লাস পানীয় জল। বিলটি পেশ হওয়ার জন্য তালিকাভূক্ত হয়েছিল ২০ নম্বরে। পরেরটা অর্থমন্ত্রীর ‘দ্য সবকা বিমা সবকি রক্ষা (বিমা সংশোধনী) বিল।’ কিন্তু সেটিই আগে পেশ হল। সভার আবহ আন্দাজ করেই স্পিকার আগে বিমা বিলটি পেশ করালেন। পরে বেলা ১২-৩১ মিনিটে পেশ হল ‘জিরামজি।’ 

    বিল পেশের প্রতিবাদে সরব হলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সৌগত রায়, টি আর বালু, ধর্মেন্দ্র যাদব, শশী থারুর, কে সি বেণুগোপাল, সুপ্রিয়া শুলে। দাবি উঠল, হয় বাতিল হোক। নয়ত সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। প্রিয়াঙ্কা বললেন, ২০ বছর আগে যখন সংসদে নারেগা পাশ হয়েছিল, তখন কোনওপক্ষই আপত্তি করেনি। কিন্তু নাম বদলের এই নেশায় কেন বুদঁ আপনারা? সৌগত রায় বিল পেশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, কাজের ‘অধিকার’ কেড়ে নিয়ে সরকারি ‘প্রকল্প’ করে দিচ্ছেন। রাজ্যের ঘাড়ে আর্থিক বোঝা বাড়াচ্ছেন। শশী থারুরের সমালোচনা, স্রেফ রাম নাম জুড়বেন বলে ইংরেজি-হিন্দি মিশিয়ে বিলের নাম দিতে হল? আর যাইহোক, রামের নামে বদনাম না করলেই পারতেন। জবাবে শিবরাজ জানান, রাম-বিনা দেশই চলে না। বাপু মহাত্মা আমাদের হৃদয়ে। মৃত্যুর সময় তাঁর মুখে শেষ বাক্যই ছিল, হে রাম। তাই মহাত্মার রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য। 
  • Link to this news (বর্তমান)