‘ও বড়ো দাঁও মেরেছে...’ মহিলা দুষ্কৃতীকে অপহরণ অপর দুষ্কৃতীর
বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: একাধিক চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলা। স্বামী দিনমজুরের কাজ করে। দম্পতির বাড়ি রহড়া থানা এলাকায়। এদিকে, সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়া এক দুষ্কৃতী ওই মহিলার কীর্তিকলাপ সম্পর্কে জানত। তার ধারণা হয়েছিল, ও কোথাও বড়ো দাঁও মেরেছে। সেই টাকা-গয়না যে করেই হোক হাতাতে হবে। এই ভাবনা থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই দুষ্কৃতী পুলিশ সেজে দলবল নিয়ে হানা দিয়েছিল দম্পতির বাড়িতে। জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে তাদের তুলে নিয়ে যায় তারা। আসলে দম্পতিকে অপহরণ করাই উদ্দেশ্য ছিল দুষ্কৃতী দলটির। যাতে মুক্তিপণের নাম করে ওই টাকা-গয়না হাতাতে পারে। তাদের সুন্দরবনের খাঁড়িতে একটি নৌকায় হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। এরপর শুরু হয় মুক্তিপণের টাকা চাওয়া। শেষমেশ ওই দম্পতিকে রহড়া থানার পুলিশ উদ্ধার করলেও মূল অভিযুক্ত হাকিম লস্করকে পাকড়াও করতে পারেনি। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।
১৪ ডিসেম্বর রাত দেড়টা নাগাদ কয়েকজন দুষ্কৃতী রহড়ার বন্দিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোড়লপাড়ায় ওই মহিলার বাড়িতে হানা দেয়। তারা বলে, থানা থেকে আসছি। তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন আসে। দুষ্কৃতীরা জানায়, মুক্তিপণ বাবদ এক কোটি টাকা ও সোনার গয়না না দিলে খুন করা হবে দম্পতিকে। এই ফোন পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন দম্পতির মেয়ে। তিনি রহড়া থানার দ্বারস্থ হন। গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অন্যদিকে, পরিচয় গোপন রেখে অপহরণকারীদের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু করেন রহড়া থানার ওসি। প্রথমে অপহরণকারীরা জানায়, নরেন্দ্রপুর থানার কামালগাজি মোড়ে টাকা নিয়ে আসতে হবে। কিছুক্ষণ বাদে তারা বলে, কামালগাজি নয়, টাকা নিয়ে আসতে হবে বারুইপুরে। সেখানে যাওয়ার পথে ফের ফোন আসে, বলা হয়, জয়নগরের বকুলতলার প্রিয়র মোড়ে আসতে হবে। ক্ষণে ক্ষণে তারা জায়গা পরিবর্তন করতে থাকে, যাতে বিভ্রান্ত হয় পুলিশ বাহিনী। এর মধ্যে ওই দম্পতির মেয়েকে অপহরণকারীরা ফোন করে বলে, সঙ্গে পুলিশ নিয়ে এলে পরিণতি খারাপ হবে। এই টানাপোড়েন যখন চলছে, তখন তদন্তকারীরা সোর্স মারফত খবর পান, কুলতলির হাকিম লস্কর এই অপহরণ কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। যে গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়েছিল, সেটিকেও শনাক্ত করা হয়। এরপর রাতেই হাকিমের ডেরায় হানা দেন পুলিশকর্মীরা।
এদিকে, পুলিশ আসার খবর পেয়ে ওই দম্পতিকে ফেলেই চম্পট দেয় অভিযুক্ত। পরে ওই দম্পতি কোনওভাবে জয়নগর স্টেশন চত্বরে চলে আসে। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে রহড়া থানার পুলিশ। তারা পুলিশকে জানিয়েছে, কুলতলির জঙ্গল ঘেরা খাঁড়িতে নৌকার মধ্যে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছিল। মারধরও করা হয়েছে। ওরা মহিলাকে একাধিকবার বলেছে, চোরাই সোনা ও টাকা কোথায়? মুক্তিপণ বাবদ সেগুলি দিতে ফোন করো বাড়িতে।