• ‘মতুয়াগড়’ বনগাঁয় শুনানিতে হাজির হতে হবে প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দাকে
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: এসআইআরের পর মঙ্গলবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতেই ‘মতুয়াগড়’ বনগাঁয় উদ্বেগের চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে। কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু বনগাঁ মহকুমা থেকেই প্রায় দেড় লক্ষ ভোটার (১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন) শুনানির জন্য ডাক পাচ্ছেন। ‘প্রজেনি ভোটারদের’ একাংশও শুনানির ডাক পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। এর পাশাপাশি মহকুমায় মোট ৮৬ হাজার ১৬৯ জনের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ধরলে, এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত যে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ ভোটার শুনানিতে ডাক পাচ্ছেন। গোটা জেলায় নাম কাটা গিয়েছে ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ১০৭ জনের। খসড়া তালিকা প্রকাশিত হতেই বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির অন্দরে চলছে নানা হিসেবনিকেশ। 

    ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় এসআইআর। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি বাংলায় এই প্রক্রিয়া চালানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। ইতিমধ্যে এসআইআর আতঙ্কে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু ঘটেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট পরিবারের। এই অবস্থায় কমিশনের তরফে প্রকাশিত খসড়া তালিকা নিয়ে কৌতূহল ছিল সব মহলে। আর তাতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চিত্রটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। এই জেলায় মোট ৩৩টি বিধানসভায় ভোটারের সংখ্যা ৮৩ লক্ষ ৬৮১। তার মধ্যে ৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৭০০ জন ভোটারকে উপস্থিত হতে হবে শুনানিতে। মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁয় চিত্রটা আরও উদ্বেগের। কারণ, ওপার বাংলা থেকে আসা বহু মানুষ এখানে ভোটার হয়ে আছেন। তাঁদের সিংহভাগেরই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। এই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ উত্তর, দক্ষিণ, গাইঘাটা ও বাগদা বিধানসভায় মোট ৮৬ হাজার ১৮৯ জনের নাম বাদ পড়েছে তালিকা থেকে। ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৬২ জনকে শুনানির মুখোমুখি হতে হবে। তার মধ্যে সবথেকে বেশি রয়েছেন গাইঘাটার বাসিন্দা? এখানে ৩৮ হাজার ৮৪৯ জনকে শুনানিতে হাজির হতে হবে। এছাড়া, বাগদায় ৩৬ হাজার ৮১০, বনগাঁ উত্তরে ৩০ হাজার ৩১৭ ও বনগাঁ দক্ষিণে ২৮ হাজার ৭৮৬ জনকে শুনানিতে হাজির হতে হবে। এর সিংহভাগই মতুয়া বলে দাবি তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের। সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘হিয়ারিংয়ে ডাক পাওয়া ভোটারদের ৮৫ শতাংশই মতুয়া। তাঁদের নাম খসড়া তালিকায় নেই। এঁদের কাছে পর্যাপ্ত নথিও নেই। সব মিলিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। বাগদা বিধানসভার বেশিরভাগ মতুয়াদেরই নাম নেই। আমাদের প্রশ্ন, বিরাট অংশের মতুয়া বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে এদেশে এসেছে। ২০০২ সাল থেকে বিজেপি এঁদের ভোট নিয়েছে। এখন তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করেছে।’ পাল্টা বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়াদের সবার নাম থাকবে। হিয়ারিংয়ের সময় মতুয়াদের কাগজপত্রের বিষয়টি আমরা দেখছি।’

    বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘ঘুরপথে মতুয়াদের নাম বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। চূড়ান্ত তালিকা বের হলেই বিজেপির সৌজন্যে মতুয়াদের দুর্দশার চিত্র সামনে আসবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)