• পোস্তায় বিধবা তরুণীকে কুপিয়ে চারতলা থেকে মরণঝাঁপ যুবকের
    বর্তমান | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে তরুণীকে ছুরি দিয়ে কোপানোর পর চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক যুবক। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পোস্তা থানা এলাকার শিবঠাকুর লেনে। বছর পঁচিশের বিধবা শিখা সিংয়ের শরীরের একাধিক জায়গায় ছুরির আঘাত রয়েছে। তাঁর অবস্থা সংকটজনক। যুবকের নাম রাজিন্দার শর্মা ওরফে ভিক্কি। তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিখা সিং পোস্তা এলাকায় বাড়িতে বসেই শাড়িতে ফলস ও পিকোর ব্যবসা করেন। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন এক মহিলা। এদিন চারতলার ওই ভাড়া ঘরে যখন ওই মহিলাকে নিয়ে কাজ করছিলেন শিখা, তখন আচমকা ওই ঘরে ঢুকে পড়েন প্রেমিক রাজিন্দার। ততক্ষণে মহিলার দুই ছেলেমেয়ে স্কুলে চলে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সম্পর্ক নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সেই সময় রাজিন্দার আচমকা পকেট থেকে ছুরি বের করে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করেন শিখাকে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোনোয় ঘাবড়ে গিয়ে পালিয়ে যান শিখার সহযোগী মহিলা। তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের ঘরের ভাড়াটিয়ারা ছুটে আসেন। তবে রক্ত দেখে কেউই সাহস করে ওই ঘরে ঢোকেননি। তবে লোকজন চলে আসায় মহিলাকে অচৈতন্য অবস্থায় ফেলে একদৌড়ে চারতলার বারান্দায় চলে যান যুবক। তারপর নীচে ঝাঁপ। এদিকে, নীচে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই যুবক। তাঁর মাথায় গুরুতর চোট। স্থানীয় যুবক রাকেশ শর্মার বক্তব্য, উপরে উঠে তাঁরা দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছেন শিখা। দু’জনকেই তাঁরা প্রথমে বিশুদ্ধানন্দ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজে। শিখা সিং সংকটজনক অবস্থায় সেখানেই চিকিৎসাধীন। রাজিন্দারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁরা।

    তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, শিখার স্বামী বছর দুয়েক আগে মারা যান। রাজিন্দার আদতে স্বামীর বন্ধু ছিলেন। সেই সুবাদে এই বাড়িতে যাতায়াত ছিল রাজিন্দারের। জানা গিয়েছে, সেখান থেকেই শিখা ও রাজিন্দার অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের সাত বছরের সম্পর্ক। শিখার স্বামী ও ছেলেমেয়ে বাড়িতে না থাকলে সেই সময় আসতেন এই প্রেমিক। বিষয়টি স্বামী জানতে পারলে স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল অশান্তি হয়। বন্ধুর সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে তাঁর। বছর দুয়েক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শিখার স্বামী। তারপর থেকে রাজিন্দার নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন এই বাড়িতে। এমনকী, তরুণীর কাছ থেকে টাকাও নিতেন বলে অভিযোগ। দু’জনের সম্পর্কের কথা অনেকেই জানতেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা হত মাঝেমধ্যে। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, স্বামীর মৃত্যুর পর রাজিন্দারকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তরুণী। কিন্তু তাতে রাজি ছিলেন না রাজিন্দার। এই নিয়েই ঝামেলা। সোমবার রাতে এই ইস্যুতে ব্যাপক ঝামেলা হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। তার জেরেই এদিন সকালে রাজিন্দার ওই বাড়িতে এসে চড়াও হয় বলে জানা গিয়েছে। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)