• বিরোধীদের তুমুল আপত্তি, ‘জি রাম জি’ বিল নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা লোকসভায়
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: ‘গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের পোশাকি নাম থেকে সেই ‘মহাত্মা গান্ধী’ নাম বাদ দিচ্ছে মোদি সরকার। বিজেপি যে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষী, এটা তারই প্রমাণ। বাংলার মানুষ বিধানসভা ভোটে এর উচিত জবাব দেবে।’ এমনই মন্তব্য করে বুধবার দলের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো গ্রামোন্নয়নের নতুন বিলের আলোচনায় মোদি সরকারকে সংসদে সমালোচনার শূলে চড়ালেন টিএমসি সাংসদরা। মঙ্গলবারই লোকসভায় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান পেশ করেছিলেন ‘দ্য বিকশিত ভারত- গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ): ভিবি-জি রাম জি বিল ২০২৫।’ ইউপিএ সরকারের আনা মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আ‌ইনকে সরাতেই আনা হয়েছে এই বিল, যা আইনে পরিণত হলে আমূল বদলে যাবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। বিরোধীদের ক্ষোভ এড়াতে সহকর্মী মন্ত্রীদের ঘেরাটোপে বিলটি পেশ করেছিলেন শিবরাজ। তবে এদিন সামনের সারিতে নিজের আসনে বসেই তা পাশের জন্য‌ আ঩বেদন করলেন। তা নিয়েই আলোচনা চলল গভীর রাত পর্যন্ত। তার জন্য সাংসদদের নৈশভোজেরও ব্যবস্থা করেন স্পিকার ওম বিড়লা। সংসদের ক্যান্টিনকে জানিয়ে দেন, রাতবিরেতে খাওয়া, তাই কোনও রান্নায় যেন লাল গুঁড়ো লঙ্কা না থাকে। শরীর খারাপ হতে পারে। কাঁচা লঙ্কা দিয়েই করতে হবে রান্না। 

    মনরেগা বাতিল করে রামের নামোচ্চারণে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের বিলের আলোচনায় প্রতিবাদ করার ইচ্ছা ছিল অভিষেকেরও। কিন্তু জরুরি কাজে তাঁকে কলকাতায় ফিরে আসতে হয়। দলের পক্ষে বিলের আলোচনায় অংশ নেন সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্র এবং জুন মালিয়া। যদিও ফিরে আসার আগে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিষেক তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রের শাসক বিজেপিকে। তিনি বলেন, ‘মোদি-শাহ জমিদারি চালাচ্ছেন। যা ইচ্ছা, তা-ই করছেন। তবে বাংলা, বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপিকে মোটেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রেয়াত করবে না। নাম বদলে নতুন বিল আনার আগে মোদি স্পষ্ট জবাব দিন, বাংলার গরিব শ্রমিকদের টাকা কবে দেবেন? নতুন বিল এনে পালিয়ে যাবেন ভাবলে ভুল করবেন। বাংলার বকেয়া ইস্যুতে আমরা লাগাতার সোচ্চার হব।’  

    বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীজির নাম বদলে রবীন্দ্রনাথকে অপমান করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। গান্ধীজি রাম রাজ্যের কথা বলেছিলেন ঠিকই। তবে সেটি হিন্দু রাজ নয়। গান্ধীজির নাম কেটে রামের নাম জুড়ে না রাম, না রহিম কারও উপকার হবে না।’ জুন মালিয়ার তোপ, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে ১০০ দিনের কাজকে গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প বলে কটাক্ষ করেছিলেন। আর সেটিকেই এখন রামের নামে আনতে হচ্ছে? গান্ধীজিকে তো বটেই, বিশ্বগুরুকেও অপমান করছেন। বাংলাকে অপমান করবেন আর ভোটের সময় পশ্চিমবঙ্গে ভোট পাখি হয়ে আসবেন? ছাব্বিশে আসনু, জবাব পাবেন।’ 

    একইভাবে কংগ্রেসের জয়প্রকাশ, আরজেডির অভয় কুমার সিনহা, ডিএমকের কানিমোঝির মতো বিরোধী সাংসদরাও প্রবল সমালোচনা করেন। বিলটি পাশ না করে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি করেন। কিন্তু সেসব অগ্রাহ্য করে বিল পাশের জেদ ধরে বসে রয়েছে মোদি সরকার। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু তো রীতিমতো হুমকির সুরে বলেছেন, ‘বিরোধীরা যতই চিৎকার করুন, বিল আমরা পাশ করিয়েই ছাড়ব।’
  • Link to this news (বর্তমান)