• সিউড়ি সুপার স্পেশালিটিতে দালালরাজ, কমিটি তৈরি, তদন্তের নির্দেশ জেলাশাসকের
    বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে দালালরাজ রুখতে এবার নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে হস্তক্ষেপ করেছেন স্বয়ং জেলাশাসক ধবল জৈন। দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে গঠন করে দিয়েছেন একটি শক্তিশালী কমিটিও। যারা নিরপেক্ষ তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট পেশ করবে। জেলাশাসকের ভূমিকায় খুশি ভুক্তভোগী রোগীর পরিজন থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ। 

    সিউড়ি সুপার স্পেশালিটিতে দালালরাজ নিয়ে ক’দিন আগে খবর প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’ পত্রিকায়। তা নিয়ে প্রশাসন মহলে তুমুল হইচই  পড়ে। তারপরই বীরভূম জেলার প্রশাসনিক শীর্ষকর্তার এই পদক্ষেপ। জেলাশাসক নিজেও মানছেন, ‘হাসপাতাল সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ আসছিল। সে সব খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

    জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওসি (স্বাস্থ্য) অতিতিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (৩), মহকুমা শাসক সহ প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের থাকার কথা ওই কমিটিতে। তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন জেলা শাসককে। কমিটির এক সদস্য বুধবার বলেছেন, ‘ডিএম সাহেবের নির্দেশ পাওয়ার পরই তদন্তের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভব্রত ঘোষ বলেন, ‘হাসপাতালে প্রচুর ভালো কাজ হচ্ছে। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তারই মাঝে হাসপাতাল নিয়ে এই ধরণের অভিযোগ কাম্য নয়।’

    দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালের রোগীদেরই একাংশ অভিযোগ করে আসছিল, লাইনে না দাঁড়িয়েই আউটডোরে রোগী দেখানো, দ্রুত শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষার ডেট পাইয়ে দেওয়া, সঙ্কটজনক রোগীকে সিসিইউতে চিকিত্সার ব্যবস্থা করে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিষেবা মেলে টাকার বিনিময়ে। একটি অসাধু চক্র এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ, ওই চক্রের সঙ্গে অশুভ আঁতাত রয়েছে হাসপাতালেরই অস্থায়ী কর্মীদের একাংশের। স্বাস্থ্য কর্তাদেরও একটা বড় অংশের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক দাদাদের সুপারিশে চাকরি পাওয়া হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মীরাই এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের মাথার উপর হাত রয়েছে রাজনৈতিক দাদাদের। হাসপাতালের সর্বত্র তাঁদের অবাধ গতিবিধি। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালি করবার চালিয়ে যাচ্ছে ওই কর্মীদের একটা অংশ। 

    গত সপ্তাহে এই অভিযোগ ঘিরে তেতে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। কতিপয় অস্থায়ী কর্মী লাইন দাঁড়ানো রোগীদের টপকে নির্দিষ্ট কিছু রোগীকে আউটডোরে ডাক্তারের ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েই ছিলেন! ধৈর্য্য হারিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করতে থাকেন। তা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা উল্টে প্রতিবাদী রোগীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। আগেও এই ধরণের ঘটনা একাধিক ঘটেছে। লাইন ভেঙে রোগীকে ডাক্তারের ঘরে ঢোকাতে গিয়ে এক স্থায়ী গ্রুপ-ডি কর্মীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন হাসপাতলেরই অস্থায়ী কর্মী প্রদীপ গড়াই। তিনি আবার অস্থায়ী কর্মী নিয়োগকারী সংস্থার ইনচার্জ। পাশাপাশি, স্থানীয় এক প্রভাবশালী দাদার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।  

    তবে, এতদিন দালালদের এহেন দৌরাত্ম্য  নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমলেও দৃষ্টান্তমূলক কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের এক কর্তার দাবি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলেই চাপ সৃষ্টি করেন রাজনৈতিক নেতারা। তাই বহু ক্ষেত্রেই সব জেনেশুনে চোখ বুজে থাকতে হয়। এবার গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে দাবি উঠেছে, হাসপাতালের ভিতর  যাঁরা এই অসাধু করবারের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বহিঃষ্কার করা হোক।
  • Link to this news (বর্তমান)