নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: নদী পেরিয়ে মঙ্গলদ্বীপ যাতায়াতে দু’দিকের মানুষের ভরসা বাঁশের তৈরি মাচা বা অস্থায়ী জেটি। পায়রাডাঙার শিবপুর ঘাট থেকে ওই জনপ্রিয় পিকনিক স্পটে যেতে নৌকাই একমাত্র ভরসা। সেখানে যেন বিপদ অপেক্ষা করছে ওত পেতে। যে কোনওদিন বাঁশের জেটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা। অথচ সেই ফেরিঘাটে আজও কোনও স্থায়ী জেটি তৈরির উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ফের আর এক শীতের মরশুমে এবারও স্থায়ী জেটি না পাওয়ার আক্ষেপের কথাই শোনা গেল সাধারণ মানুষ থেকে পিকনিক করতে আসা মানুষের মুখে।
ডিসেম্বরের শীত প্রায় মধ্যগগনে। ফলে পর্যটন মরশুমে মঙ্গলদ্বীপে মানুষের ঢল নামছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই জনপ্রিয় পিকনিক স্পটে পৌঁছনোর পথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে এখনও প্রশ্নের মুখে, তা মানছেন পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে ছুটির দিন মানেই সকাল থেকে নদীয়ার পার্শ্ববর্তী উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন মঙ্গলদ্বীপ দর্শনে। মূলত পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ জনপ্রিয় গঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা এই ব-দ্বীপটি। ফলে পর্যটকদের সঙ্গে থাকছে প্রচুর রান্নার সরঞ্জাম, গ্যাস সিলিন্ডার, সাউন্ড সিস্টেম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস। গঙ্গার মাঝে দ্বীপ পর্যন্ত সেই সমস্ত জিনিস নিয়ে যাওয়ার ভরসা নৌকাই। আর নৌকায় উঠতে গেলে চাপতেই হবে নড়বড়ে মাচা দিয়ে তৈরি জেটিতে। ভিড়ের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না কারও। কখনও কখনও একসঙ্গে ৩০জন চেপে পড়েন নড়বড়ে বাঁশের মাচায়। পর্যটকদের বক্তব্য, ভিড় বাড়লেই মাচা দুলে ওঠে। যে কোনওদিন মানুষ এবং মালপত্র সমেত সেই বাঁশের মাচা যে ভেঙে পড়তে পারে, তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। সেক্ষেত্রে প্রাণহানি কেবল সময়ের অপেক্ষা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থায়ী জেটির দাবি বহু বছর ধরেই প্রশাসনের কাছে জানানো হলেও বাস্তবে কোনও কাজ এগোয়নি। বিশেষ করে শীতকাল ও নতুন বছরের সময় পর্যটকের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তখন এই অস্থায়ী ফেরিঘাট বড়সড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, ফেরিঘাটটি বর্তমানে চুক্তিভিত্তিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং সার্বিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। তবে, স্থায়ী জেটি নির্মাণের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা বা সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি। এই প্রসঙ্গে রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ জানান, স্থায়ী জেটি নির্মাণের জন্য জল পরিবহণ দপ্তরের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত তার অনুমোদন মেলেনি।
ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যদি কোনওদিন এই বাঁশের মাচা ভেঙে বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায়িত্ব নেবে কে? পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মঙ্গলদীপের জনপ্রিয়তা বাড়লেও নিরাপদ ও স্থায়ী ফেরিঘাটের অভাব যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট।