হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, ব্যাহত পরিষেবা, কাঁথি পুরবোর্ডকে শোকজ রাজ্যের
বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নির্বিচারে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির অভিযোগ। সেইসঙ্গে পরিষেবায় ব্যর্থতা এবং মানুষের সঙ্গে বোর্ডের সদস্যদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। এই তিন কারণে কাঁথি পুরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলার্সকে শোকজ করল রাজ্য। মানুষের ভোটে জেতার পর চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি নির্বিচারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছেন বলে শোকজ চিঠিতে জানিয়েছে রাজ্য। এনিয়ে আপত্তি করায় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে দুর্ব্যবহার জুটেছে। আবার, পরিষেবার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হলেও আলো, রাস্তা, নিকাশি, সৌন্দর্যায়ন সবেতেই ব্যর্থতা প্রকট বলেও দাবি করা হয়েছে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব শোকজ করেছেন। আগামী সাতদিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শহরজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। পুরসভায় ক্ষমতায় থাকা শাসকদলের নেতাদের থরহরিকম্প অবস্থা।
সম্প্রতি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর এবং চাকদহ পুরসভার নির্বাচিত বোর্ড ভেঙে মহকুমা শাসকদের প্রশাসক হিসেবে বসিয়েছে রাজ্য। কাঁথি, গয়েশপুর সহ বেশ কয়েকটি পুরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলার্সকে শোকজ করেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। পুর পরিষেবা ঠিকমতো না মেলার কারণেই শোকজ বলে জানা গিয়েছে। কাঁথি পুরসভার হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে বর্তমান বোর্ড। এনিয়ে শহরবাসীর একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ। আপত্তি জানিয়ে প্রচুর চিঠি জমা পড়েছে। লোকদেখানো সেইসব চিঠি ‘ডিসপোজ’ হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
শহরে সাফাই নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নর্দমা ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না বলে অভিযোগ। জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজও তথৈবচ। অথচ সাফাই, ড্রেন পরিষ্কার প্রভৃতি কাজের জন্য ৪৫০জন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে(ডিআরডব্লু) কর্মী আছেন। প্রতিদিন তাঁদের পারিশ্রমিক ৩০৩টাকা। প্রতি মাসে তাঁদের মজুরি দিতে পুরসভার নিজস্ব ফান্ড থেকে ৩৬লক্ষ টাকা খরচ হয়। এছাড়াও পুরসভার অন্যান্য কাজে আরও ১৫০জন অস্থায়ী কর্মী আছেন। তাঁদের বেতনের জন্য পুরসভার ওন ফান্ড থেকে ১৭লক্ষ টাকা খরচ হয়।
হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি থেকে চেয়ারম্যানের আচার-আচরণ এবং পুর পরিষেবায় ক্ষুব্ধ রাজ্য। ১৬ডিসেম্বর দপ্তর শোকজ চিঠি পাঠিয়েছে। সেইমতো আজ, বৃহস্পতিবার বেলা ২টো নাগাদ পুরসভায় বোর্ড অব কাউন্সিলার্সের মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে শোকজের চিঠির জবাব তৈরি হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, শোকজ চিঠির প্রতিটি ছত্রে চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির ঔদ্ধত্য আচরণ, জোর-জবরদস্তি করে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি এবং এনিয়ে আপত্তি জানানোয় দুর্ব্যবহারের প্রসঙ্গ উঠেছে।
২০২২সালে ১৬মার্চ কাঁথি পুরসভার বোর্ড গঠন হয়। প্রথমে চেয়ারম্যান হন সুবল মান্না। প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে তাঁর প্রশংসা করে পদ খোয়ান সুবলবাবু। তারপর সুপ্রকাশ চেয়ারম্যান হন। কিন্তু, বোর্ড চালাতে গিয়ে তাঁর ঔদ্ধত্যে শহরের বহু বাসিন্দা ক্ষুব্ধ। এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে সুপ্রকাশকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপের কোনও উত্তর দেননি। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিরঞ্জন মান্না বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার বেলা ২টোয় বোর্ড অব কাউন্সিলার্সের মিটিং ডেকেছি। সেখানে শোকজের জবাব রেডি করা হবে।