সংবাদদাতা, কান্দি: পৌষমাসজুড়ে কান্দির দোহালিয়া গ্রামের দক্ষিণাকালী দেবীকে সরষে ফুল, মুলোর ফুল, নতুন আলু সহ শীতকালীন প্রথম ফসল উৎসর্গ করার রীতি দীর্ঘদিনের। বহু বছরের প্রচলিত এই প্রথার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। সেই রীতি মেনে পৌষের প্রথমদিন, বুধবার সকাল থেকে চাষিরা দেবীর কাছে নিজেদের জমির প্রথম ফসল উৎসর্গ করলেন। চাষিরা জমিতে অধিক ফলনের আশায় বহু বছর ধরে এই প্রথা চালিয়ে আসছেন।
এই মন্দির কয়েকশো বছরের প্রাচীন। মন্দিরের সঙ্গে বাংলার রাজা লক্ষ্মণ সেন ও বল্লাল সেনের নাম জড়িয়ে রয়েছে। সেবাইতদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পৌষের প্রথমদিন থেকে প্রত্যেক চাষি নিজের জমির শীতকালীন ফসল প্রথমে দেবীকে উৎসর্গ করেন। বহু বছরের এই নিয়মের আজও কোনও পরিবর্তন হয়নি। এমনটা চলবে গোটা পৌষমাসজুড়ে। মন্দিরের পুরোহিত বিকাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই এলাকার বাসিন্দারা দক্ষিণাকালীকে গ্রাম্যদেবী হিসেবে মানেন। তাই চাষিরা জমির শীতকালীন ফসল দেবীকে প্রথমে উৎসর্গ করবেন। এরপর ওই ফসল নিজের বাড়িতে বা বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন। কয়েক হাজার চাষি এভাবেই মাসভর আসবেন। এরজন্য সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে।
দোহালিয়া গ্রামের চাষি অরূপ পাল বলেন, এটা শুধুমাত্র আমাদের গ্রামের রীতি নয়, আশেপাশের গ্রামের চাষিরাও এই প্রথা মেনে চলেন। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির আশায় এমনটা করা হয়। মন্দিরের অপর পুরোহিত প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কয়েকশো বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। শুধু ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি নয়, ভক্তদের বিশ্বাস, এই রীতি পালন করলে গৃহস্থের বাড়িতে খাদ্য ভাণ্ডার বছরভর পরিপূর্ণ থাকে।
যাদের নিজস্ব জমি নেই, তাঁদের জন্য আবার অনেকেই মন্দিরের সামনে শীতকালীন ফসলের সম্ভার সাজিয়ে বসছেন। মুলো ১০টাকা, সরষে ফুল পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। মন্দির কমিটির সম্পাদক গৌরব চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখন বহু পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। কিংবা জমি থাকলেও অনেকে শীতকালীন ফসল লাগান না। সেক্ষেত্রে প্রথা বজায় রাখতে দোকান থেকে ফসল কেনার পর তাঁরা দেবীকে উৎসর্গ করেন। কান্দির দোহালিয়া দক্ষিণাকালী মন্দিরের সামনেসর্ষে ফুল, মূলো ও ফুলের পশরা। -নিজস্ব চিত্র