‘আপনার নম্বর থেকে ফোনে শিল্পপতিদের হুমকি নিষিদ্ধ সংগঠনের’, ডিজিটাল অ্যারেস্ট, বাগুইআটিতে ৯৯ লক্ষ খোয়ালেন প্রাক্তন ওএনজিসি কর্তা
বর্তমান | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘দেশের নামকরা শিল্পপতিদের ফোন করে হুমকি দিচ্ছে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। তাদের দাবি না মেটালে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আপনার মোবাইল নম্বর থেকেই করা হচ্ছে ফোন,’ এ কথা শুনেই হতবাক ৭৪ বছরের বৃদ্ধ। তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তা ছিলেন। ওএনজিসি’র প্রাক্তন আধিকারিক।
তাঁর মতো মানুষও হতবাক কারণ, ফোন এসেছে খোদ মুম্বই পুলিশের হেড কোয়ার্টার থেকে। এই ঘটনায় বৃদ্ধ ভয়ানক অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। একপ্রকার সন্ত্রস্ত হয়ে বলেন, ‘স্যার, আমি তো কোনও ফোন করিনি।’ ফোনের অপর প্রান্তে থাকা পুলিশ অফিসার তখন ধমক দিয়ে বলেন, ‘আপনার আধার দিয়ে সিম কার্ড তোলা হয়েছে।’ এরপর বৃদ্ধের হোয়াটসঅ্যাপে ‘সুপ্রিম কোর্টের লোগো’ দেওয়া অ্যারেস্টের অর্ডার কপি পাঠায়। টানা চারদিন বাড়িতে ডিজিটাল অ্যারেস্ট থাকার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে তাঁর অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ যাচাই করতে সমস্ত টাকা পাঠিয়ে দিতে বলে। সঙ্গে আশ্বাস দেয়, ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) খতিয়ে দেখে টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেবে।’ এরপর বৃদ্ধ নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৯ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। কয়েকদিন পর তিনি ফোন করেন ওই নম্বরে। ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মুম্বই পুলিশের হেড কোয়ার্টারের ওই পুলিশের ফোন। বৃদ্ধ এবার বুঝলেন প্রতারকদের পাল্লায় পড়েছেন।
ততক্ষণে অবশ্য যা বিপদ ঘটার ঘটে গিয়েছে। কারণ নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে তিনি ৯৯ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সে টাকা তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়। এবার সব হারিয়ে প্রায় অসহায়। মঙ্গলবার বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ জানান বৃদ্ধ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওএনজিসি’র এই প্রাক্তন কর্তার বাড়ি বাগুইআটি থানা এলাকায়। ২০১১ সালে অবসর নেন। রাজারহাট রোডে একটি আবাসনে থাকেন। ২৯ নভেম্বর তাঁর কাছে ফোন এসেছিল। প্রতারকরা যে নিষিদ্ধ সংগঠনের কথা বলেছিল ভয় দেখাতে সে সংগঠনের ছ’জনের ছবি পাঠায় তারা। এরপর সিমকার্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে। তারপর ভিডিও কল করে টাকা দিতে বলে। বৃদ্ধ তাদের জানান, তাঁর তিনটি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১৭ হাজার টাকা রয়েছে। ২ ডিসেম্বর তিন দফায় আরটিজিএস করে ৯৯ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। সে টাকা যাচাই করে আরবিআই দ্রুত ফেরত পাঠাবে বলেছিল প্রতারকরা। কিন্তু চারদিন পর টাকা ফেরত না পেয়ে যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল ৬ ডিসেম্বর সেই নম্বরে ফোন করেন বৃদ্ধ। এবং ফোন বন্ধ পান।
প্রসঙ্গত দিনকয়েক আগে মুম্বই পুলিশেরই নাম করে সল্টলেকের এক বৃদ্ধার কাছে ফোন এসেছিল। মহিলাকে বলা হয়েছিল, তাঁর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের অ্যাকাউন্টে ৭৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বৃদ্ধা চারদিন ডিজিটাল অ্যারেস্ট ছিলেন। একইভাবে আরবিআইকে দিয়ে টাকা যাচাই হবে বলে ১ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল প্রতারকরা। এবার ভুয়ো মুম্বই পুলিশের শিকার হলেন বাগুইআটির বৃদ্ধ।