অবসরের ঠিক মুখে দেশের বিচারকদের একাংশের অবাঞ্ছিত, অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রাসঙ্গিক রায়দানের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার মধ্যপ্রদেশের এক জেলা জজের বিরুদ্ধে সাসপেনশন স্থগিতের আবেদন সংক্রান্ত মামলায় এই পর্যবেক্ষণ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ' মামলাকারী তাঁর অবসর গ্রহণের ঠিক আগে হাত খুলে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন! এই প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না।'
মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলার মুখ্য জেলা ও দায়রা বিচারক রাজারাম ভারতীয়া। তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর। কিন্তু তাঁকে সাসপেন্ড করা হয় ১৯ নভেম্বর। সাসপেনশনকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।
সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশের এক রাজনৈতিক নেতা—যিনি একটি স্টোন ক্রাশার ফার্মেরও মালিক—তাঁর বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করেন পান্নার জেলা কালেক্টর। বিচারক রাজারাম তাঁর অবসরের মুখে কালেক্টরের নির্দেশ খারিজ করে দেন। তার পরেই বিচারকের নির্দেশ নিয়ে চুলচেরা স্ক্রুটিনি হয় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে। হাইকোর্টের প্রশাসনিক বিভাগ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয় তাঁকে সাসপেন্ড করার। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিচারকের অবসরের ১১ দিন আগে। তবে কী কারণে সাসপেনশন, তার ব্যাখ্যা দেয়নি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রশাসনিক বিভাগ।
ইতিমধ্যে মধ্যপ্রদেশ সরকার রাজ্য সরকারের কর্মীদেয় অবসরের বয়স ৬২ বছর করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ২০ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিজ্ঞপ্তিকে মান্যতা দেয়। ফলে বিচারক রাজারামের অবসর গ্রহণের সময়সীমাও বেড়ে যায়। সেই মতো বিচারক রাজারামের অবসর হবে ২০২৬ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত জানান, বিচারক যখন জরিমানা খারিজের রায় দিচ্ছিলেন, তখন তিনি জানতেন না তাঁর মতো সরকারি কর্মীদের অবসরের বয়স এক বছর বেড়ে গিয়েছে।
বিচারক রাজারামের আইনজীবী বিপিন সাংঘি বুধবার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন, তাঁর মক্কেলের সার্ভিস রেকর্ড খুবই ভালো ও নজরকাড়ার মতো। অবসরের ঠিক আগে তাঁর দেওয়া ২টি রায়ের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে একজন বিচারককে তাঁর জুডিশিয়াল অর্ডারের জন্য সাসপেন্ড করা যায়? বিশেষ করে যখন ওই বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে যখন উচ্চ আদালতে আপিল মামলার সুযোগ রয়েছে এবং উচ্চ আদালতে দরকার পড়লে বিচারকের ত্রুটিপূর্ণ রায় সংশোধন করে দিতে পারে।
আইনজীবী সাংঘির সওয়াল শুনে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এটা ঠিকই যে, কোনও জুডিশিয়াল অফিসারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ করা যায় না এবং এই কারণে তাঁকে সাসপেন্ডও করা যায় না। কিন্তু তাঁর দেওয়া রায় যদি স্পষ্টতই অসৎ হয় অথবা সেই রায় নিয়ে যদি গুরুতর প্রশ্ন ওঠে বা তা সন্দেহজনক হয়, সেই ক্ষেত্রে কী হবে?
কী কারণে বিচারক রাজারাম মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ না করে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন, সেই প্রশ্নও তোলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারকের আইনজীবী উত্তরে জানান, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রশাসনিক বিভাগ সর্বসম্মত ভাবে সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁর মক্কেল ভেবেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে তিনি সুবিচার পাবেন। সুপ্রিম কোর্ট সেই যুক্তি শুনে জানায়, হাইকোর্টের প্রশাসনিক বিভাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানকার বিচার বিভাগের কাছে আবেদন করা যেত। কিন্তু বিচারক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা করেননি।
সুপ্রিম কোর্ট বিচারকের আইনজীবীকে জানিয়েছে, সাসপেনশন অর্ডার প্রত্যাহার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে মামলা করতেই পারেন। শীর্ষ আদালত এই মামলা শুনবে না। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট চার সপ্তাহের মধ্য়ে মামলার নিষ্পত্তি করবে।