ওডিশার পর্যটন মানচিত্রে ফের কলঙ্কের দাগ। সম্প্রতি রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের উপকণ্ঠে ধৌলি পাহাড়ের কাছে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীকে গণধর্ষণ এবং তার বন্ধুকে মারধর করা হয়েছে। এই ঘটনায় ওডিশার পর্যটনস্থলগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারাটি ফের প্রকাশ্যে এসেছে।
পুরী থেকে ভুবনেশ্বর কিংবা দারিংবাড়ি— ওডিশার পর্যটনস্থলগুলি বাঙালি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এই জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলি ক্রমে অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে। ঘটে চলেছে একের পর এক ধর্ষণ-গণধর্ষণ, মারধর, হেনস্থার মতো অপরাধ। কাঠগড়ায় রাজ্য প্রশাসনের 'উদাসীন' মনোভাব।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৌলি পাহাড়ের জঘন্য অপরাধের মূল চক্রী হ্যাপি ভোই নামে এক কুখ্যাত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে পুলিশের উপরে হামলা-সহ প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। জেল থেকে বেরোনোর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তিন ঘণ্টা ধরে সে এই তাণ্ডব চালালেও পুলিশের কাছে কোনও খবর ছিল না।
সমালোচকরা বলছেন, এই ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় যে, অপরাধীদের মনে আইনের প্রতি নূন্যতম ভয় নেই। সরকার বা পুলিশ কিছু করবে না বুঝেই, ভয়ডরহীন ভাবে তারা দাপিয়ে বেরাচ্ছে এই পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে।
গত জুন মাসে গোপালপুর সৈকতে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ এবং সেপ্টেম্বরে পুরীর বলিহারচণ্ডীতে একই ধরনের ঘটনার পরে ফের ধৌলি পাহাড়ের ঘটনা— রাজ্যের পর্যটনস্থলগুলির নিরাপত্তাকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
গোপালপুরের ঘটনার পরে উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রভাতী পরিদা মহিলা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ওডিশা পুলিশের ‘ট্যুরিস্ট সেল’-কে আরও মজবুত করার এবং জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলিতে টহলদারি আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ধৌলি পাহাড়ের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন ঘটেনি।
লিঙ্গরাজ বা নন্দনকাননের মতো ওডিশার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ট্যুরিস্ট সেল আছে বটে। কিন্তু সেখানে তাতে পর্যাপ্ত জনবল নেই বলে অভিযোগ। খণ্ডগিরির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্যুরিস্ট সেলের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ‘ম্যানপাওয়ার’-ই অনুমোদন করে উঠতে পারেনি সরকার।
ভুবনেশ্বরের DCP জগমোহন মীনা জানিয়েছেন, পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ করে নির্জন এলাকাগুলিতে টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার একই ধরনের অপরাধ প্রশাসনের উদাসীন মনোভাবেরই পরিচয় বলে দাবি করছেন সমালোচকরা। কাজেই ওডিশা যেতে সাবধান।