• পুরনো ভোটার-আধার কার্ডে সব ঠিক, অথচ SIR-এ নাম ভুল একই পরিবারের ৩জনের! দায় নেই, বলছেন BLO...
    ২৪ ঘন্টা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মৃত্যুঞ্জয় দাস: SIR-এর পর খসড়া ভোটার তালিকায় পরিবারের প্রায় সকলেরই নাম বিভ্রাট। দায় এড়াচ্ছেন বিএলও থেকে বিডিও,  চূড়ান্ত বিভ্রান্তিতে বিষ্ণুপুরের পরিবার। ভোটার কার্ড থেকে শুরু করে আধার কার্ডে নামের বানান রয়েছে যথাযথ। ২০২৫-এর ভোটার তালিকাতেও প্রত্যেকের নামের বানান ছিল যথাযথ। কিন্তু  SIR-এর পর সবই যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। খসড়া ভোটার তালিকায় পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিনজনেরই নামের বানান ভুল। আতঙ্কে বিএলও থেকে বিডিও সর্বত্র ছুটেছেন পরিবারের ষাটোর্ধ কর্তা। কিন্তু কারোরই কিছু করার নেই বলে দায় এড়িয়েছেন সকলে। এমতাবস্থায় কী করণীয় তা বুঝতে না পেরে উদ্বেগে দিন কাটছে ওই পরিবারের। 

    বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা বিশ্বরূপ গোস্বামী। স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ নিয়ে পরিবারের ৪ জন সদস্য। প্রত্যেক্যেরই আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডে নামের বানান রয়েছে যথাযথ। সেই আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডে থাকা বানান অনুযায়ী গননা ফর্মও পুরণ করেছিলেন বিশ্বরূপ গোস্বামী। কিন্তু কমিশনের তরফে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হতেই নির্দিষ্ট পোর্টালে নিজেদের নামের বানান দেখে চমকে উঠেছেন ওই পরিবারের সদস্যরা। দেখা গিয়েছে, খসড়া তালিকায় পুত্রবধূর নামের বানান ঠিকঠাক থাকলেও পরিবারের বাকি ৩ সদস্যের নামের বানানে বিস্তর গরমিল রয়েছে। স্ত্রী শাশ্বতী গোস্বামীর শুধু ইংরাজি বানানেই নয় ভুল রয়েছে বাংলা বানানেও। বিষয়টি নজরে আসার পরই স্থানীয় বিএলওর কাছে ছুটে যান ষাটোর্ধ ওই গৃহস্থ। বিএলও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তাঁর কিছু করণীয় নেই। বিডিওর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বিডিওর কাছে গিয়েও হতাশ হতে হয় ওই গৃহস্থকে। বিডিও জানিয়ে দেন এক্ষেত্রে তাঁরও কিছু করণীয় নেই। এমতাবস্থায় কীভাবে ভোটার তালিকায় নিজেদের নামের বানান ঠিক করবেন তা নিয়ে রীতিমত উদ্বেগে দিন কাটছে ওই পরিবারের।

    অন্যদিকে, বাঁকুড়ায় ১২ টি বিধানসভার মধ্যে যেখানে গ্রাম ভিত্তিক ১১ টি বিধানসভায় সর্বাধিক ১৩ হাজারের নীচে ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। সেখানে প্রায় দ্বিগুণ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে শহর ভিত্তিক বাঁকুড়া বিধানসভায়। এজন্য বিরোধীরা কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ভুয়ো ভোটার রাখার অভিযোগ করছেন তো কেউ আবার রাজ্যের কর্মসংস্থানের নীতিকে দায়ী করছেন। তৃণমূল অবশ্য এর সব দায় ঠেলেছে নির্বাচন কমিশনের কাঁধে। 

    SIR-এ বাঁকুড়া জেলায় বাদ পড়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৮২১ জনের নাম। এর মধ্যে সর্বাধিক ভোটারের নাম বাদ পড়েছে বাঁকুড়া বিধানসভায়। এই বিধানসভায় এস আই আর এ নাম বাদ পড়েছে মোট ২২ হাজার ৩৫১ জনের নাম। সূত্রের খবর বাদ পড়া ভোটারদের একটা বড় অংশই শহুরে ভোটার। জেলার অন্যান্য ১১ টি বিধানসভাই গ্রামভিত্তিক। সেখানে বাদ পড়াদের সংখ্যা বেশ কম। ওই ১১ টি বিধানসভার মধ্যে সর্বাধিক  বাদ পড়েছে শালতোড়া ( ১২৯৩৩), বড়জোড়া ( ১২৪১১) ও ছাতনা ( ১২১৬৯) বিধানসভায়। অন্যান্য বিধানসভাগুলিতে বাদ পড়াদের সংখ্যা ১২ হাজারের কম। সর্বনিম্ন বাদ পড়েছে কোতুলপুর (৫৬৭৮),  ইন্দাস ( ৬৮৫৮), সোনামুখী (৭৯৩৩) ও তালডাংরা ( ৮৫৪১) বিধানসভায়। যেখানে গ্রাম ভিত্তিক অন্যান্য বিধানসভায় বাদ পড়াদের সংখ্যা এত কম সেখানে কেন প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক ভোটার বাদ পড়লেন শহর ভিত্তিক বাঁকুড়া বিধানসভায়?

    বিজেপির দাবি বাঁকুড়া পুরসভাকে দখলে রাখতে রাজ্যের শাসক দল এতদিন বাঁকুড়া পুর এলাকায় বিপুল সংখ্যক ভুয়ো ভোটারকে এতদিন তালিকায় রেখে দিয়েছিল। বামেদের দাবি গ্রামাঞ্চল থেকে কাজের খোঁজে যারা শহরে এসেছিলেন রাজ্যের সরকারের ব্যার্থতায় তাঁরা হতাশ হয়ে হয় ফিরে গেছেন নিজের গ্রামে অথবা অন্য রাজ্যে। বাঁকুড়া শহরের ভোটারদেরও একটা বড় অংশ কাজের খোঁজে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে এত বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের কোনো তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়ার সব দায় কমিশনের।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)