অর্কদীপ্ত মুখোপাধ্যায় ও রক্তিমা দাস: ছব্বিশের আগে বাংলায় নজিরবিহীন পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দফতরে নিরাপত্তা দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আজ, বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠি দিয়েছে কমিশন। আগামীকাল, শুক্রবার থেকে CEO-র দফতরের প্রথম ও তৃতীয় তলায় মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনকী, দফতরের আধিকারিকরা গাড়ি নিয়ে যেখানেই যাবেন, সঙ্গে থাকবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
বাংলায় তখন SIR-র কাজ চলছিল। কাজের চাপের অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছিলেন BLO-রা। সেই আন্দোলনের পৌঁছে গিয়েছিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরেও। রাজ্যর মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ঘরের সামনে ধরনায় বসেছিলেন BLO অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যরা। এরপর দফতরটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকারের সায় না থাকলেও ঠিকানা বদলের তোড়জোড় শুরু করে গিয়েছে।
CEO মনোজ কুমার আগরওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, 'অতি শীঘ্রই এই অফিস ছাড়তে চলেছি। জুলাই মাসেই অফিস অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে বলছে কমিশন। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। রাজ্যের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি। অগত্যা কমিশন নিজেই সিপিং কর্পোরেশনের কলকাতাস্থিত বাড়িতেই ভাড়া নিয়ে চলে যাচ্ছে'। এসবের মাঝেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দফতরে আসছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এদিকে ২৩ ডিসেম্বর থেকেই SIR-এর হিয়ারিং শুরু হচ্ছে বলে খবর। কমিশন সূত্রে খবর, হিয়ারিংয়ের সময় যাতে কোনওভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি বা অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে DG ও DEO-দের চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক। আগামী বছর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় ভোটার দিবসে রাজ্যের প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অন্তত ১ জন করে BLO-কে পুরস্কৃত করবেন তিনি।
এর আগে, ডানকুনিতে জীবিত তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম খসড়া তালিকা মৃত হিসেবে থাকায় শোকজের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। রেহাই পেলেন না ভোটারও। কলকাতার শ্য়ামপুকুর ও উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর। দু'জায়গাতেই নাকি ফর্ম ফিলাপ করেছেন তিনি! অভিযোগ, এক জায়গায় ফর্মে নিজে সই করেছেন, আর এক জায়গায় পরিবারের কাউকে দিয়ে সই করিয়েছেন। ওই ভোটারকে শোকজের নোটিশ পাঠিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে খবর, ২০০২ ভোটার লিস্টে নাম নেই এরকম অনেকের নাম খসড়া তালিকায় আছে। অতিরিক্ত যাচাইয়ের জন্য তাদের অনেককেই কমিশন প্রয়োজনে ডাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রেসক্রাইব ১৩ টি নথির মধ্যে একটি দেখাতে হবে। আবার ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় বাবা-মায়ের কারও নামই যদি না থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হিয়ারিংয়ের ডাকা হতে পারে। আধার ছাড়া বাকি ১২ টি নথির মধ্যে একটি দেখাতে হবে। তাহলেই নাম থাকবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়। আবার ভুল তথ্য় দিলে বা বাবা-মায়ের বয়সের ব্যবধান ১৫ বছরের বেশি হলে কিংবা ভোটারের সঙ্গে অভিভাবকের বয়সের অযৌক্তিক গরমিলের (Logical discrepancy) মতো আর বেশ কয়েকটি হিয়ারিংয়ের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।