এই সময়, শিলিগুড়ি: জিটিএ চিফ অনীত থাপার অনুরোধে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিলেন সদ্য চাকরি খোয়ানো পাহাড়ের শিক্ষকেরা। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়োগের অভিযোগে বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট পাহাড়ের ৩১৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করে দেয়। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ সংযুক্তি মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার থেকে পাহাড় জুড়ে সমস্ত সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের একটাই যুক্তি, পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগের কোনও আইনি প্রক্রিয়াই নেই। তাহলে শিক্ষক নিয়োগ বেআইনি হলো কী করে? অনীত থাপা অবশ্য এ দিন জানান, জিটিএর পক্ষ থেকে তিনি রাজ্য সরকারের পরামর্শ নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন। আজ, শুক্রবারই কলকাতায় যাচ্ছেন অনীত।
বৃহস্পতিবার ভানু ভবনে চাকরি খোয়ানো শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে তিনি বলেন, 'আমি এই ৩১৩ জন শিক্ষকের পাশে শেষ পর্যন্ত থাকব। রাজ্য সরকারের পরামর্শ নিয়ে উচ্চ আদালতে যাব।' সংযুক্তি মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিবেক ছেত্রী বলেন, 'আমরা স্কুল বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছিলাম। জিটিএ চিফ আমাদের হয়ে লড়াই করার কথা ঘোষণার পরে আপাতত স্কুল বন্ধ রাখার ডাক প্রত্যাহার করা হলো।' চাকরি খোয়ানো শিক্ষকদের অভিযোগ, মূল সমস্যা জিটিএ চুক্তি মেনে পাহাড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি না-করা।
জিটিএর চুক্তির আগে পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগের অলিখিত নিয়ম ছিল, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি অবৈতনিক শিক্ষক নিয়োগ করতেন। পরে তাঁদের শিক্ষা দপ্তরের অনুমতি নিয়ে স্থায়ী করা হতো। জিটিএ চুক্তির পরেও স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি না-হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবী অবৈতনিক শিক্ষকেরা আন্দোলন করলে রাজ্য সরকার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিচার করে ৪৩৯ জন শিক্ষককে নিয়োগ করে। ওই শিক্ষকেরা সকলেই কম পক্ষে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছেন। মামলার জেরে একসঙ্গে ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুলগুলিও বিপাকে পড়েছে। সামনেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এই সময়ে শিক্ষকের অভাবে স্কুল চালানো সমস্যা হয়ে পড়েছে।
মিরিকের সৌরিনির রবীন্দ্রনাথ হাইস্কুলের কথাই ধরা যাক। স্কুলে মোট শিক্ষক ২৯ জন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো। আদালতের নির্দেশে স্কুলের আট জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। বাকিদের মধ্যে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক। চাকরি খোয়ানো এক শিক্ষক মুকেশ শর্মা বলেন, 'আট জন শিক্ষক আচমকা স্কুল থেকে সরে গেলে ছাত্রছাত্রীদের কী হবে? তা ছাড়া আমাদের কী দোষ? ২০১৫ সাল থেকে স্থায়ী পদে চাকরি করছি। স্কুল সার্ভিস কমিশনই পাহাড়ের জন্য তৈরি হয়নি। অন্যের দোষের শাস্তি কেন আমাদের পেতে হবে?'