দূষণ মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপ, বিএস-সিক্স ছাড়া বাইরের রাজ্যের সব গাড়ি নিষিদ্ধ দিল্লিতে
বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: দিল্লি এবং সংলগ্ন এনসিআর এলাকায় ক্রমশ মাত্রাছাড়া হচ্ছে দূষণ পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবারও শহরের দূষণ ছিল বিপজ্জনক সীমায়। একাধিক এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (একিউআই) ৪০০ পেরিয়েছে। এই দূষণ মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই দিল্লির বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত বিএস-সিক্স (ভারত স্টেজ সিক্স) ছাড়া অন্য কোনও যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে পারবে না। অর্থাৎ, যে সব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দিল্লির নয়, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর থাকবে। প্রাইভেট এবং কমার্শিয়াল—দু’ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। শুধুমাত্র আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ছাড় মিলবে। দূষণ মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার থেকেই এই নিয়ম লাগু করেছে দিল্লি সরকার। কিন্তু জারি হওয়া নির্দেশিকার যথাযথ পালন হচ্ছে কি না, তা দেখার ব্যবস্থা আদৌ আছে কি? এই প্রশ্ন ঘিরে তুমুল জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এদিন দিল্লির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে বেড়িয়ে দেখা গিয়েছে, এই সংক্রান্ত নজরদারি কার্যত শিকেয় উঠেছে। উল্লিখিত নিয়ম জারির পর এই ব্যাপারে নজরদারি চালানোর জন্য এদিন দিল্লিতে সেভাবে পুলিশ কর্মীদের দেখা মেলেনি। দেশের রাজধানী শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, এলাকাগুলিতে স্পষ্ট হয়েছে দূষণ মোকাবিলায় যানবাহনের উপর নজর রাখার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীর অভাবের ছবিটা স্পষ্ট। তবে যেসব এলাকায় নজরদারি চলেছে, তার একটি বড় অংশেই পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন গাড়িচালকরা।
কর্মীদের অভাবের কথা অবশ্য মানতে চায়নি দিল্লি পুলিশ। তারা জানিয়েছে, শুধুমাত্র দূষণ মোকাবিলায় নজরদারির জন্য অতিরিক্ত প্রায় ৬০০ জন পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় ১৫০টি চেকপোস্ট তৈরি করে কঠোর নজরদারি শুরু করা হয়েছে। দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর সীমানা, দিল্লি-নয়ডার চিল্লা সীমানা, দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু, তিক্রি সীমানার মতো একাধিক এলাকায় চেকপোস্ট তৈরি করে নজরদারি চলেছে। অন্তত এমনই দাবি করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লির ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে একাধিক জায়গায় নজরদারি চালানো হয়েছে।
দিল্লি সরকার একইসঙ্গে নির্দেশিকা জারি করেছে, পিইউসি (পলিউশন কন্ট্রোল সার্টিফিকেট) ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে কোনও গাড়ি বা বাইকের জ্বালানি মিলবে না। ফলে পিইউসি পেতে বুধবার রাত থেকেই দিল্লি, এনসিআরের বিভিন্ন দূষণ পরীক্ষা কেন্দ্রে লাইন পড়ে যায়। এদিন এই ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে দিল্লির কয়েকটি পেট্রল পাম্পে যান পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দরসিং সিরসা। তাঁর দাবি, নিয়ম কঠোরভাবে মানা হলে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে দিল্লির বাতাসে একিউআইয়ের মান উন্নত হবে। যদিও দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী দিনকয়েক আগে স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, মাত্র ন’থেকে দশ মাসের মধ্যে দূষণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তা নিয়ে বিতর্কের রেশ এখনও অব্যাহত। মনে করা হচ্ছে, সেই বিতর্ক কিছুটা সামাল দিতেই ফের এক সপ্তাহের ‘লক্ষ্যমাত্রা’ রেখেছেন সিরসা। বিজেপি অবশ্য যাবতীয় দায় চাপানো শুরু করেছে পূর্বতন শাসকদল আপের উপরেই। এদিন দিল্লি সরকারের মন্ত্রী পরবেশ বর্মা বলেছেন, ১১ বছরে আপ অন্তত কিছু কাজ করলে এই পরিস্থিতি হত না।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার লোকসভায় দিল্লি এনসিআরের দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু লোকসভা সারাদিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় আলোচনা হয়নি। এই ব্যাপারে এদিন সংসদ ভবন চত্বরে সরকার পক্ষের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধীরা।