• ‘জি রাম জি’ পাশ করিয়েই অধিবেশন মুলতুবি, মহাত্মার নাম বাদে হইচই, বিলের কপি ছিঁড়ে তুমুল বিক্ষোভ বিরোধীদের
    বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: বুধবার মধ্যরাত পেরিয়ে শেষ হয়েছিল আলোচনা। বৃহস্পতিবার দুপুরেই লোকসভায় পাশ হল বিল। মহাত্মা গান্ধীর নামাঙ্কিত আইন মুছতে ‘কৌশলে’ রামের নামে আনা সেই গ্রামীণ রোজগার বিল পাশ ঘিরেই বেঁধে গেল ধুন্ধুমার! বিলের কপি ছিঁড়ে তুমুল বিক্ষোভে সংসদ উত্তাল করলেন বিরোধী কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টির সাংসদরা। চলল প্রবল হট্টগোল। তার মধ্যে কোনওমতে ‘ধ্বনিভোটে বিল পাশ হল’ জানিয়েই সারাদিনের মতো অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। শুধু লোকসভা নয়, রাজ্যসভাতেও ‘জি রাম জি’ বিলের প্রতিবাদ জানান তৃণমূলের বক্তা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন আর ডেরেক ও’ব্রায়েন। এমনকি গভীর রাতে রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হলে সংসদ চত্বরে ধরনার পরিকল্পনাও করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

    এদিন বেলা ১২টা ২৮ মিনিটে ‘দ্য বিকশিত ভারত- গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ): ভিবি-জি রাম জি বিল ২০২৫’ পাশের জবাবি ভাষণ শুরু করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং। সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী সাংসদরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। গান্ধীজির গ্রাম স্বরাজের ছবি হাতে তাঁরা নেমে আসেন ওয়েলে। স্লোগান ওঠে, ‘উই ওয়ান্ট নারেগা! রামজি বিল ওয়াপস লো! মোদি সরকার হায় হায়!’ শিবরাজের সমর্থনে সরকার পক্ষের সাংসদরা টেবিল চাপড়ালেও বিরোধীদের স্লোগানের শব্দে তা ঢেকে যায়। মন্ত্রী কথা শুনছেন না দেখে প্রতিবাদের পারদ আরও চড়ান কংগ্রেস-তৃণমূল এমপিরা। বিলের কপি ছিঁড়ে শূন্যে ওড়ানো হয়। লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল উৎপলকুমার সিংয়ের টেবিলের দু’পাশে উঠে পড়েন কংগ্রেসের হিবি ইডেন, ডিন কুরিয়ান, এস জ্যোতিমণির মতো ছয় সাংসদ। লোকসভার কার্যবিবরণীর প্রতিলিপি ভাঁজ করে ‘কাগজের প্লেন’ বানিয়ে শিবরাজের দিকে ছোড়েন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রও। হট্টগোলের মধ্যেই শোনা যায় কাকলি ঘোষদস্তিদারের চিৎকার, ‘বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। এভাবে বিল পাশ করা অন্যায়।’ প্রতিবাদে তৃণমূল সাংসদরা ‘ওয়াক আউট’ করতেও উদ্যত হন। এর মধ্যেই বেলা ১টা ৭ মিনিটে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর ভাষণ শেষে বিল পাশের কথা জানিয়েই তড়িঘড়ি সভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। তাঁর নির্দেশে বিক্ষোভরত সাংসদের নামের তালিকা তৈরি করেছেন মার্শাল। নেওয়া হতে পারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। যদিও আজ, শুক্রবারই শেষ হচ্ছে শীতকালীন অধিবেশন। 

    বুধবার রাত ১টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত এই বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন ৯৮ জন। সেটিকেই অন্যতম সাফল্য বলে উল্লেখ করে এদিন নিজের পিঠ চাপড়ানোর চেষ্টা করেন শিবরাজ। যদিও এই বিলে গরিব শ্রমিকদের আদৌ কী উপকার হবে, স্পষ্ট জানাতে পারেননি। শুধু বলে গেলেন, ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়!’ বাজপেয়ির কবিতা আশ্রয় করে এও জানিয়ে দেন, ‘হাঙ্গামা মে হার নেহি মানুঙ্গা।’ যদিও বিলে পেশের দিনের মতো এদিনও ‘ভয়ে’ শিবরাজ বেছে নিয়েছিলেন তিন নম্বর সারি। তাঁকে রক্ষা করতে সামনের সারিতে বসেন নিশিকান্ত দুবে, গিরিরাজ সিং। বিলে ‘মহাত্মা গান্ধী’র নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগের জবাবে শিবরাজ বলেন, দেশভাগে রাজি হয়ে, ইমার্জেন্সি কার্যকর করে গান্ধীজির আদর্শ খতম করেছে কংগ্রেস। আমরা সরকারি প্রকল্পের সাফল্যের মধ্যে বাপুকে জিন্দা রেখেছি।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)