ডিসেম্বর নয়, আগস্ট পর্যন্ত চাকরিতে ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা, এসএসসি মামলায় নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, গ্রুপ সি-ডি’র তালিকা প্রকাশে আপাতত নিষেধাজ্ঞা
বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ৩১ ডিসেম্বর নয়! স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মামলায় ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা ২০২৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পুরোনো চাকরিতেই বহাল থাকবেন। পাবেন বেতন। বৃহস্পতিবার এমনটাই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি অলক আরাধের বেঞ্চ এসএসসির আবেদন মেনে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে। একইসঙ্গে গ্রুপ সি এবং ডি-র এক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর না করার আদেশ দিয়েছেন দুই বিচারপতি। অর্থাৎ, এদিন সর্বোচ্চ আদালতে কার্যত জোড়া জয় হাসিল করল স্কুল সার্ভিস কমিশন।
২০১৬ সালের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩ এপ্রিল দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়া কলুষিত। তাই সেটি সম্পূর্ণ বাতিল করা হল। এক লহমায় চাকরি হারান প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী। শীর্ষ আদালত তার রায়ে এও জানিয়েছিল, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এবং ততদিন পর্যন্ত ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের চাকরি বহাল থাকবে।
সেই সময়সীমা শেষ হতে বাকি আর মাত্র ১১-১২ দিন। তাই সুপ্রিম কোর্টে নতুন নিয়োগের জন্য দিন বৃদ্ধির আবেদন করে কমিশন। এদিন শুনানিতে এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একাদশ-দ্বাদশের বাছাই প্রক্রিয়া শেষে, আগামী ৭ জানুয়ারি রেজ়াল্ট প্রকাশ হবে। ১৫ জানুয়ারি থেকে কাউন্সেলিং। নবম-দশমের ক্ষেত্রে বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হবে মার্চের মাঝামাঝি। তারপর কাউন্সেলিং। ফলে সময় বৃদ্ধি করুন।’ সেই আবেদন গ্রাহ্য করে আগামী আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি আরও আট মাস বজায় রইল।
গ্রুপ সি-ডি কর্মীদের চাকরি অবশ্য বহাল রাখেনি শীর্ষ আদালত। ওই সব শূন্যপদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পর্বেই শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে যাঁরা যোগ্য, তাঁদের নাম প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ এও জানায়, যাঁরা চাকরি পাননি অথচ ওয়েটিং লিস্টে নাম ছিল, তাঁদের মধ্যেও যদি কেউ যোগ্য থেকে থাকেন, সেই নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ‘যোগ্য’দের ক্ষেত্রে বয়সের ছাড় এবং নতুন নিয়োগে সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কমিশন। এদিন তারই শুনানিতে আইনজীবী কল্যাণবাবুর সওয়াল করেন, ‘গ্রুপ সি এবং ডি-র ক্ষেত্রে যারা চাকরিই পাননি, তাদের মধ্যে থেকে কে যোগ্য কে অযোগ্য তা কী করে বাছা সম্ভব?’ শীর্ষ আদালত জানতে চায়, কতজন ছিল ওয়েটিং লিস্টে? এসএসসির আইনজীবী জানান, ‘২৬ লক্ষ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ফলে এই তালিকা এভাবে প্রকাশ করা অসম্ভব।’ যদিও গ্রুপ সি-ডি’র পক্ষে আবেদনকারীদের একাংশ তালিকা প্রকাশের দাবি করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি অলক আরাধের বেঞ্চ জানিয়ে দিল, হাইকোর্টের এই নির্দেশ কার্যকর হবে না। বাকি মামলা হাইকোর্ট যেমন নিয়মিত শুনানি করছে, তেমনই চলবে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডলে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে লিখেছেন, এই রায় মুখ্যমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশের আস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এতে আরও পরিষ্কার, এসএসসি স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার পথেই এগোচ্ছে। এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘বাড়তি সময় পেলেও আমরা কোনওরকম ঢিলেমি করছি না। আমাদের পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ীই সব চলবে। আদালত নির্ধারিত সময়ের একমাস আগেই আমাদের গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য থাকছে।’