• বিয়ের চার মাসের মধ্যেই পণের দাবিতে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ, গ্রেফতার স্বামী
    বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: ‘পণের’ দাবিতে বিয়ের চারমাসের মধ্যে গৃহবধূকে খুনের অভিযোগ উঠল শ্বশুড়বাড়ির বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বারাসত শহরের অশ্বিনীপল্লিতে। মৃতা গৃহবধূর নাম সুনীতা সরকার (২৩)। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। মৃতার বাপের বাড়ির সদস্যরা স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে বারাসত থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী সৌম্য দত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে বারাসত আদালতে তোলা হলে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

    বারাসত পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের শক্তিনগরে থাকেন সর্বেন্দ্রদেব সরকার। তিনি রাজ্য সরকারের সেচদপ্তরে চাকরি করেন। তাঁর মেজ মেয়ে সুনীতা সরকার। ২০২৪ সালে অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্স নিয়ে বিকম পাস করেন তিনি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিসিএ’র। গত ৩ আগস্ট দেখাশোনা করেই তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় বারাসতের অশ্বিনীপল্লির বাসিন্দা সৌম্যর। সৌম্য জামা-কাপড়ের ব্যবসা করে। বাবা সুজয় দত্ত কলকাতা পুলিশের এএসআই। মেয়ের বিয়েতে নগদ ছাড়াও সমস্ত জিনিসপত্র দিয়েছিলেন সর্বেন্দ্রদেব। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই ব্যবসার জন্য বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে চাপ দিতে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একারণে সুনীতার উপর চাপ সৃষ্টি করতো তারা। মেয়ের সুখের কথা ভেবে টাকা দিয়েছিলেন সর্বেন্দ্রদেব। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল, টাকার দাবিতে সুনীতার উপর শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা তত বাড়ছিল। গত সোমবার সৌম্য শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিল। আর বুধবার রাতে হঠাৎই শ্বশুর গৃহবধূর বাপের বাড়িতে ফোন করে দুর্ঘটনার কথা জানায়। 

    মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে তাঁরা এসে দেখেন, সুনীতা বিছানার উপর পড়ে আছে। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন, তখনও রক্ত বের হচ্ছিল। তড়িঘড়ি তাঁকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বারাসত থানার পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই মৃতার বাবা খুনের অভিযোগ দায়ের করেন জামাই সৌম্য দত্ত, শ্বশুর সুজয় দত্ত ও শাশুড়ি নূপুর দত্তের বিরুদ্ধে। পুলিশ সৌম্যকে গ্রেফতার করেছে। মৃতার বাবা সর্বেন্দ্রদেব সরকার বলেন, মাত্র চার মাস আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। এর মধ্যেই মেয়েকে খুন করলো ওরা। বিয়ের পর থেকে শুধু টাকা দাবি করতো জামাই।

     কয়েকদিন আগে ব্যবসার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল। না দেওয়ায় ওরা অত্যাচার চালিয়ে মেয়েকে খুন করেছে। তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। পুলিশ শুধুমাত্র স্বামীকে ধরেছে। শ্বশুর পুলিশে চাকরি করে বলে প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এড়িয়েছে, দাবি সর্বেন্দ্রবাবুর। এ নিয়ে বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনজনের নামে খুনের অভিযোগ হয়েছে। স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জনের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)