থানার সেকেন্ড অফিসার! নাম ভাঁড়িয়ে খোদ কাউন্সিলারকে প্রতারণা, ধৃত
বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ‘বরানগর থানার মেজোবাবু বলছি। থানায় কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ হবে। আপনার কোটায় একজন করে সুযোগ পাবেন। দ্রুত নাম, বায়োডেটা পাঠান। সঙ্গে প্রার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট, আধার কার্ড। প্রসেসিং ফি হিসেবে লাগবে ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা।’ থানার পুলিশ অফিসারের নাম ভাঁড়িয়ে প্রতারণার এহেন নয়া ফাঁদে পা দিলেন খোদ বরানগরের কাউন্সিলার। আর টাকা খোয়ালেন তাঁর দুই ‘ক্যান্ডিডেট’। যদিও পুলিশি তৎপরতায় সেই টাকার অধিকাংশটাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারপর ঘটনার তদন্তে নেমে আমডাঙা থেকে চার প্রতারককে গ্রেফতার করে বরানগর থানা। নাম মতিয়ার রহমান, হাফিজুল ইসলাম মণ্ডল, মেহেরুল্লা মণ্ডল ও মেহেরুল আলি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বরানগর পুরসভার কাউন্সিলারদের কাছে পরপর এই ধরনের ফোন আসতে শুরু করে। হোয়াটসঅ্যাপ কল। প্রোফাইল পিকচারে বিশ্ব বাংলার লোগো। বুধবার সকালেও একই কাণ্ড। রিক্রুটমেন্টের সুযোগ দেখিয়ে বলা হয়, ‘যা করার তাড়াতাড়ি করবেন।’ নিয়োগ সংক্রান্ত এই প্রস্তাব শুনে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার প্রায় আকাশ থেকে পড়েন। খবর যায় চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকের কাছে। তিনি থানায় ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। যদিও পুলিশ জানায়, এই ধরনের ফোন থানা থেকে করা হয়নি। পরিস্থিতি বুঝে থানা থেকে সব কাউন্সিলারদের ফোন করে প্রতারণায় ছক সম্পর্কে অবহিত করা শুরু হয়।
কিন্তু ততক্ষণে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছেন আইনজীবী তথা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ও দক্ষিণ বরানগর শহর তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ বর্ধন। ক্যান্ডিডেট হিসেবে এক যুবতী ও যুবকের নাম ‘প্রস্তাব’ করেন। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেনি প্রতারকরা। সেই দুই চাকরিপ্রার্থীকে ফোন করে ‘প্রসেসিং ফি’ বাবদ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা করে নিয়ে নেয় তারা। বিশ্বজিৎ বর্ধন বলেন, ‘আইন-আদালত, দলের কাজ নিয়ে থাকতে হয় সবসময়। যে সময় ফোনটা এসেছিল, ব্যস্ত ছিলাম। ফলে বিষয়টা বুঝতে পারিনি। প্রতারণার শিকার হই। পরে বুঝতে পেরে দ্রুত পুলিশকে জানাই।’ বিষয়টি জানতে পেরে আসরে নামে পুলিশ। টাকা যে অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, ব্যাংকে ফোন করে তা ফ্রিজ করানো হয়। জানা গিয়েছে, যুবকের পুরো টাকাই ফ্রিজ করানো গিয়েছে। তিনি কয়েকদিনের মধ্যেই তা ফেরত পেয়ে যাবেন।
আর যুবতীর ৩০ হাজার টাকা ফ্রিজ করানো গিয়েছে। বাকি টাকা প্রতারকরা সরিয়ে ফেলেছে। তদন্তে নেমে বুধবার রাতে পুলিশ আমডাঙা থেকে প্রতারণা চক্রের ওই চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করে এই চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।