• এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না, যার মাশুল দিতে হয়, মোদিকে হুঁশিয়ারি মমতার
    বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ব্যবসায়ীদের এজেন্সির ভয় দেখানো, বা দিনের পর দিন হকের টাকা না দেওয়া। মোদি জমানায় দুয়োরানি যদি কোনও রাজ্য হয়ে থাকে, তাহলে তা স্রেফ পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রমাণ বারেবারে মিলেছে। কিন্তু ততই কঠোর হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাছোড় মনোভাবে একাই লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর পালটা হুংকার ছুড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের উদ্দেশে। তা সে রাজনৈতিক মঞ্চ হোক, বা শিল্প সম্মেলন। বৃহস্পতিবারও তার অন্যথা হল না। নরেন্দ্র মোদিকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করবেন না, যার জন্য আগামী দিনে মাশুল গুনতে হয়’। কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে বিভাজনের খেলায় মেতেছে, মোদি সরকারকে সামনে রেখে যেভাবে বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করছে, তার বিরুদ্ধেই এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং বার্তা দিয়েছেন ঐক্যের।

    বড়ো শিল্প হোক বা ছোটো ব্যবসা, কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স বা ইডির মতো এজেন্সির জুজু দেখাচ্ছে। তা নিয়ে এদিন ফের তোপ দাগেন মমতা। বলেন, ‘সর্বত্র আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। সকালে সূর্যের উদয় হবে, না এজেন্সির উদয়? কেউ জানে না। ব্যবসায়ীদেরই তাঁদের ব্যবসার দেখভাল করতে দেওয়া হোক। আমরা শিল্প ও বাণিজ্য স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। যাঁরা খেটে খান, তাঁদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই, সবাই আনন্দে থাকুন। মানসিকভাবে শান্তিতে থাকুন।’ এরপরই শিল্পমহলকে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘যদি ভবিষ্যতে কোনও সুযোগ আসে, আমরা আপনাদের মানসিক শান্তি বজায় রাখব।’ সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, দেশে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বদলের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ রাজ্য। অথচ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাকে বদনামের পালা চলছে। বাইরের কোনও জায়গার অশান্তির ছবি বাংলার নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজমাধ্যমে।’ তাঁর পরামর্শ, কাউকে আক্রমণ করার আগে একটু মানবিক হওয়া দরকার। মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের লক্ষ্য যে বিজেপি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘মহাত্মা গান্ধী হোন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বা রাজেন্দ্র প্রসাদ—বিজেপি কারওকেই সম্মান করে না, নিজেদের নেতাদেরও না।’ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন মমতা। এরপরই শ্রীকৃষ্ণের নাম উচ্চারণ করে আক্রমণ শানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বলেছেন, ‘শ্রীকৃষ্ণ বলতেন, ধর্ম মানে ধারণ করা। ধর্ম পবিত্রতা, মানবিকতার কথা বলে। বিভেদ কোনও সমাধান হতে পারে না। আমরা শান্তি ভালোবাসি, একতা ভালোবাসি।  আমি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু চাই। কিন্তু আপনি এমন কিছু ভুল কাজ করবেন না, যার নেতিবাচক প্রতিক্রয়া তৈরি হতে পারে। আগামী দিনে ফল ভুগতে হতে পারে, এমন কাজ করবেন না।’ মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, নীরবতাই শক্তি। আর ঈর্ষায় কোনও লাভ হয় না।    

    শিল্পসভায় এদিন ফের কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রসঙ্গ টানেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকার পশুখাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এরাজ্যে ডিমের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলেও তোপ দাগেন তিনি। বলেন, ‘এত সমস্যা সত্ত্বেও আমি বাংলার মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দিচ্ছি। সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে শামিল হয়েছি। শান্তি ফিরিয়েছি।’ তাঁর বার্তা, যেখানে শান্তি আছে, রাতে নিশ্চিন্তে ঘুম হয়, সেখানেই লগ্নি আসে। 
  • Link to this news (বর্তমান)