প্রথম শুনানিতেই নাম বাদ নয়, ‘এনকোয়ারি’র পর যাবে কমিশনের দ্বিতীয় নোটিশ
বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর আপাতত জেলায় জেলায় জোরকদমে চলছে শুনানির প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার ভোটারদের নোটিশ পাঠানোর কথা থাকলেও প্রক্রিয়াগত সমস্যায় কাজ শুরু করা যায়নি। শুক্রবারই এই কাজ শুরু হবে। আর এর মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর। শুনানিতে দেওয়া নথি নিয়ে কমিশনের সন্দেহ থাকলে প্রথমেই ভোটারের নাম বতিল হবে না। নিজেকে ভারতীয় ভোটার হিসেবে প্রমাণের জন্য ফের সুযোগ পাবেন সংশ্লিষ্ট ভোটার। রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক বা ডিইওদের এমনই নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে যাঁদের নিজের বা কোনও আত্মীয়ের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই এবং সেই মর্মেই তাঁরা ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করেছেন, এমন ভোটারদের শুনানির চিঠি পাঠানো হবে। পাশাপাশি ইনিউমারেশন ফর্মে যেসব ভোটারের উল্লিখিত আত্মীয়ের অংশ নিয়ে কমিশনের সংশয় রয়েছে, এমন ভোটাররাও শুনানির ডাক পাবেন। নোটিশ পাওয়ার পর কমিশন নির্ধারিত উপযুক্ত নথি পেশ করে নিজেকে ভারতীয় ভোটার হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। আর এখানেই ভোটারদের দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চাইছে কমিশন।
জেলাশাসকদের পাঠানো নির্দেশিকায় কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, শুনানিতে ডাক পাওয়া ভোটার যে নথি পেশ করবেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে ইআরওদের। সংবিধানের ৩২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৬ ও ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই নথি গ্রহণযোগ্য কি না, তা স্থির করবেন ইআরওরা। এক্ষেত্রে যদি ভোটারের পেশ করা নথি সন্দেহজনক মনে হয়, তৎক্ষণাৎ সেই ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট ভোটারের পেশ করা নথি সম্পর্কে স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত করতে হবে ইআরওদের। প্রয়োজনে ভোটারের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। তারপরও যদি সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়, সেক্ষেত্রেও ভোটারের নাম বাদ যাবে না। বরং সেই সন্দিগ্ধ ভোটারকে ফের একটি নোটিশ ইস্যু করতে হবে। যেখানে তাঁর থেকে জানতে চাইতে হবে, কেন তাঁর নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না? দ্বিতীয় এই নোটিশ পাওয়ার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে প্রমাণ করতে না পারেন, কেবলমাত্র সেই পরিস্থিতিতেই চূড়ান্ত তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যাবে।
কমিশনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, কোনও যোগ্য ভোটার যাতে তালিকা থেকে বাদ না যায়, সেকারণেই এই পদক্ষেপ। এদিনই বিধানসভা ভিত্তিক এইআরও নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে কমিশন। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ব্যখ্যা, বিহার এসআইআর থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে চাইছে কমিশন। পাশাপাশি একরকম সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতেই চলছে পশ্চিমবঙ্গ সহ বাকি রাজ্যগুলির এসআইআর পর্ব। ফলে অযথা ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা। কারণ, গলদ বুঝলে গোটা প্রক্রিয়া বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েই রেখেছে শীর্ষ আদালত।
এদিকে, শুনানির নোটিশ আঞ্চলিক ভাষায় ছাপানোর কাজ শেষ না হওয়ায় এদিন তা বিলি শুরু করা যায়নি বলে খবর। আজ, শুক্রবার থেকেই এই কাজ শুরু হবে। আর এরমধ্যেই শুরু হচ্ছে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিকদের দপ্তর স্থানান্তরের কাজ। ১৩ নম্বর স্ট্র্যান্ড রোডের শিপিং হাউসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলে সরে যাবে সিইও অফিস। সেকারণে দপ্তরের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।