নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: লোকসভা অধিবেশনে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার উত্তাল হল কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশন। অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে পড়ে যে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। পরে অবশ্য পরিস্থিতি সামলে যায়। পরিবেশ ‘হালকা’ করতে গানে গলা মিলিয়ে বছরের শেষ পুর অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে।
এদিন অধিবেশনে নিন্দা প্রস্তাব আনেন তৃণমূল কাউন্সিলার অরূপ চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ‘বন্দে মাতরম্’ স্লোগানে নিষেধাজ্ঞা, ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন, বন্দে মাতরম বলতে গিয়ে বিজেপি সাংসদের ‘বন্দে ভারত’ উচ্চারণ—এভাবে বারবার বাংলা-বাঙালির অপমানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনেন অরূপ।
এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ভুল জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে শুরু করে সম্প্রতি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভুলে বানানে লেখা চিঠি। একে একে নিন্দা প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ দেবাশিস কুমার, বৈশ্বানার চট্টোপাধ্যায়। সবশেষে নিন্দা প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে ওঠেন মেয়র। প্রথম লাইনেই যিশুর বাণী আওড়ান ফিরহাদ।
ফিরহাদ বলেন, ‘ভগবান এদের ক্ষমা করে দাও, এরা কী করছে এরা নিজেরাই জানে না।’ এরপর মেয়র বক্তব্য রাখতে শুরু করলেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘বিহারে যেভাবে সংখ্যালঘু মহিলার হিজাব ধরে টানা হচ্ছে, তাতে এনডিএ’কে চাবুক মারা উচিত!’ পরে তিনি ব্রিটিশদের লেখা সাভারকরের মুচলেকার কথাও উল্লেখ করেন।
মেয়র আরও বলেন, ‘মুসলিম লিগের সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যৌথ সরকার চালিয়েছিলেন!’ তারপরেই সজলের মুখে শোনা যায়, ‘মিনি পাকিস্তান’ প্রসঙ্গ। তা শুনে মেজাজ হারান মেয়র। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, ‘এমন কথা বলেছি, সেটা প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। পদত্যাগ করব।’ তখন রীতিমতো উত্তেজিত তিনি। ফিরহাদকে এই অবস্থায় দেখে চেয়ারপার্সন মালা রায়-সহ কয়েকজন কাউন্সিলার তাঁকে সামলান।
অন্যদিকে, বিজেপি কাউন্সিলারের সঙ্গে তখন বচসা তুঙ্গে তৃণমূল কাউন্সিলারদের। তৃণমূল কাউন্সিলার রীতা চৌধুরী তেড়ে আসেন বিজেপি কাউন্সিলার মিনাদেবী পুরোহিতের দিকে। তাতে হাতাহাতির উপক্রম হয়। ওয়েলে নেমে দেবাশিস কুমার, অসীম বসুরা পরিস্থিতি সামলান। মেয়র সকলকে শান্ত হতে বলেন। চেয়ারপার্সন মালা রায়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করেন। শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ‘আমি বাংলায় গান গাই...’ পরিবেশন করেন অসীম বসু। অন্য কয়েকজন কাউন্সিলারও গলা মেলান তাতে। এবছরের মতো শেষ হয় পুর অধিবেশন। পুরসভার অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।