• শিল্পবান্ধব বাংলায় বাধার অভিযোগ, কেন্দ্রকে তুলোধোনা মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সিবিআই, ইডির ভয় দেখানো হচ্ছে। সারাক্ষণ যদি এজেন্সির আতঙ্ক থাকে, তাহলে ব্যবসা করবে কী করে?’ তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবেই বাংলায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্র। নিয়োগ দুর্নীতি-সহ নানা মামলায় নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারের নেপথ্যেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও ফের অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

    বাংলাকে নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও কড়া সুর শোনা যায় তাঁর গলায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু মানুষ বলছে বাংলায় শিল্পের সম্ভাবনা নেই। এটা পুরোপুরি ভুয়ো কথা। রাজ্যের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা খবর ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, বাংলা একদিন গোটা বিশ্বকে পথ দেখাবে। বাংলা যা পারে, আর কেউ তা পারে না।’

    তিনি জানান, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিল্প, পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি রাজ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য। সেই কারণেই প্রতি বছর কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। তার ফলেই দেশ-বিদেশ থেকে লগ্নি আসছে, বাড়ছে রাজ্যের আয়। বিরোধীরা শিল্প ও কাজের সুযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও রাজ্য সরকার কাজ দিয়েই তার জবাব দিচ্ছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।

    এই মঞ্চ থেকেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক’ বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘মনরেগা প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা জাতির পিতাকে সম্মান না করে, তাহলে আমরা করব।’ তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যের কর্মশ্রী প্রকল্পের নাম বদলে রাখা হবে ‘মহাত্মা-শ্রী’।

    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গান্ধীজি, নেতাজি-সহ সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান করাই বাংলার সংস্কৃতি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

    এদিন বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই জিএসটি নিয়েও ফের ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন রাজ্যের নিজস্ব কর বলে কিছু নেই। শুধু জিএসটি আছে। বলা হয়েছিল জিএসটি এলে রাজ্যের লাভ হবে। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যের ক্ষতি হচ্ছে।’ তাঁর অভিযোগ, জিএসটির নামে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়েছে। রাজ্যের প্রাপ্য টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

    ভুয়ো খবর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ সব বুঝে গিয়েছে। মিথ্যা প্রচার দিয়ে বাংলার সম্মান নষ্ট করা যাবে না।’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়ো তথ্য নিয়ে সতর্ক থাকারও বার্তা দেন তিনি।

    বক্তব্যের শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাজই আমাদের পরিচয়। শিল্প, পরিকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা— সব ক্ষেত্রেই বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের পথ কেউ রুখতে পারবে না।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)