• খসড়া লিস্টেও বাংলাদেশি! নতুন তথ্যে চিন্তায় কমিশন
    এই সময় | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: সোনারপুরের পিন্টু দাস, উত্তর দমদমের পলি রাও, বর্ধমানের মায়া দোলুইরা এখন একই রকম বিড়ম্বনায়! তাঁরা প্রত্যেকেই দিব্যি জীবিত, কিন্তু মঙ্গলবার প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁদের দেখানো হয়েছে ‘মৃত’ বলে। রাজপুর–সোনারপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুরের বাসিন্দা পিন্টু দাস পেশায় ভ্যানচালক। তিনি ও তাঁর বাবা দু’জনেই এনিউমারেশন ফর্ম ফিলআপ করেছিলেন। বাবার নাম উঠলেও কমিশনের লিস্টে পিন্টু ‘মৃত’। উত্তর দমদম পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার গণেশ রাওয়ের স্ত্রী পলিরও অবস্থা একই রকম। অথচ, ওই দম্পতি অনেক বছর ধরেই ভোট দিচ্ছেন। গণেশের নাম লিস্টে উঠলেও পলিকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে।

    বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা এখানকার বাসিন্দা। আমার বাবা ও মায়ের নাম ২০০২–এর লিস্টেও ছিল। ফর্মও জমা দিলাম। তা সত্ত্বেও কী ভাবে আমাকে মৃত দেখাচ্ছে?’ আবার বর্ধমান পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাহির সর্বমঙ্গলা পাঞ্জাবি পাড়ার বাসিন্দা, বছর আঠান্নর মায়া দলুই জন্ম থেকেই রয়েছেন এ শহরে। তাঁর পূর্বপুরুষরাও এখানেই বড় হয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকায় তাঁর পরিবারের বাকি পাঁচ সদস্যের নাম থাকলেও মায়াকে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘আমাকে তো খসড়া লিস্টে মৃত দেখানো হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার ডেথ সার্টিফিকেট চাইছি।’

    নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছে, সেই সব জায়গার বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) কারণ দর্শাতে বলা হচ্ছে। তবে এই ভোটারদের কারও নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যাবে না। তাঁদের ফর্ম–৬ জমা করে নাম তোলার আবেদন করতে হবে। প্রশ্ন উঠছে, যদি ‘সার’ শুরুর সময়েই যদি এমন ‘ভুল’ হয়, তার জন্য সাধারণ ভোটারদের ভুগতে হবে কেন?

    আবার হুগলির চণ্ডীতলার ১২১ নম্বর বুথের ভোটার পায়রাগাছা খানাবাটি গ্রামের লাবনী ঘোষকেও ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু জীবিত ব্যক্তিকে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে তা–ই নয়, নিজের বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও ‘নিখোঁজ’ দেখানো হয়েছে, এমন ভোটারও আছেন। উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের বন্দিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন বৈদ্য ও তাঁর স্ত্রী আমিনা বেগম দু’জনেই এনিউমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। খসড়া তালিকায় স্বামীর নাম থাকলেও আমিনাকে ‘নিখোঁজ’ দেখানো হয়েছে। এই সব বিভ্রান্তি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

    খসড়া তালিকা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই আবার কমিশন চিন্তিত ‘ভূতুড়ে’ ও ‘বিদেশি’ ভোটার নিয়ে। রাজ্যের সিইও দপ্তর সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার খসড়া তালিকা প্রকাশের দিনই ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) অফিস থেকে ১৮ জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিকের নাম পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দপ্তরে। এফআরআরও জানিয়েছে, এঁদের প্রত্যেকের ভারতীয় ভোটার কার্ড (এপিক) রয়েছে। খসড়া লিস্টে এঁদের নাম আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে সিইও দপ্তর থেকে নির্দেশ গিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের (ডিইও) কাছে। সিইও মনোজ আগরওয়াল জানান, ‘সার’-এর খসড়া তালিকায় এঁদের নাম থাকলে তা বাদ দেওয়া হবে। তবে কমিশন এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিএলও বা ইআরও–দের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না। কারণ, এনিউমারেশন পর্বে ফর্ম ফিলআপ যাঁরা করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই নাম খসড়া তালিকায় উঠেছে। নথি যাচাইয়ের পরে ফাইনাল লিস্টেও এমন কোনও ‘ভূতুড়ে’ বা ‘বিদেশি’ নাগরিকের নাম থাকলে কমিশন সংশ্লিষ্ট বিএলও ও ইআরও–দের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে।

    সূত্রের দাবি, এফআরআরও–র পাঠানো লিস্টে এমন একজন ‘বাংলাদেশি’ নাগরিকের নাম রয়েছে, যিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী! বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্কে। এফআরআরও–র লিস্টে এমন তিনজন রয়েছেন, যাঁরা ভোটার কার্ড ছাড়াও কলকাতা পুরসভা থেকে জন্মের শংসাপত্র তৈরি করেছেন। এফআরআরও বিষয়টি কলকাতা পুরসভার নজরেও এনেছে বিষয়টি। এ দিকে, কমিশন বিএলও–দের পাশাপাশি এক ভোটারকেও শো–কজ় করল দু’জায়গায় এনিউমারেশন ফর্ম ফিলআপ করার জন্য। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর এবং উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর— দুই বিধানসভাতেই নাম ছিল ওই ভোটারের।

  • Link to this news (এই সময়)