চিত্তররঞ্জন দাস: নজরে ছাব্বিশ। 'ভয় পেয়েছে ডাইনি মমতা, হারাবে এবার ক্ষমতা', ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিতর্কে বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক কিষাণ কর্মকার। 'মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য আমরা বরদাস্ত করব না', পালটা হুঁশিয়ারি রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের।
বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। ছাব্বিশের রাজনীতির উত্তাপ বাড়ছে বঙ্গে। মেসিকাণ্ডে যখন সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিরোধীরা, তখন ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করলেন কিষাণ কর্মকার। তাঁর সেই পোস্ট ঘিরেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, 'ওরা বাংলার অস্মিতা বোঝে না। বাংলাকে অপমান করতে ছাড়ে না। যারা বঙ্কিমচন্দ্রকে দাদা বলে, যারা রবীন্দ্রনাথের অবদান অস্বীকার করে, মাস্টারদাকে মাস্টার বলে। ওনার সাঙ্গপাঙ্গরা এই ধরনের কথাবার্তা বলবে আর বাংলা থেকে মুছে যাবে তারই রাস্তা প্রশস্ত করছে। এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই'। বিজেপি সাধারণ সম্পাদক কিষাণের অবশ্য সাফ কথা, "২০২৬-এর ক্ষমতায় আসতে পারবেনা তৃণমূল। বাংলার মানুষ সরে যাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে সরকার চালানো হচ্ছে। রাজ্য সরকার শুধু তৃণমূলের। তাই আমি দাত্যহীন ভাষায় কটাক্ষ করছি'।
এর আগে, হুগলির উত্তরপাড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পোস্টে কমেন্ট করে বিপাকে পড়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল বিজেপি।
একদিনের বৃষ্টিতে তখন বানভাসি উত্তরবঙ্গ। বন্যা ধসে মৃত্যুমিছিল। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় বন্য়াদুর্গত সঙ্গে দেখাকরতে গিয়ে আক্রান্ত হন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেই ঘটনার নিন্দা করে এক্স হ্য়ান্ডেলে পোস্ট দেন মোদী। লেখেন,'যেভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা, যাদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন'।
মোদীর সেই পোস্টের নিচে উত্তরপাড়া পুরসভার তেইশ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর র অর্ণব রায় লেখেন, 'আপনি যদি বন্যা দুর্গত এলাকায় রিলিফ না নিয়ে যান তাহলে বাংলা আপনাকে দুয়ারে ক্যালানি দেবে'। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগে সরব হয় স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপি নেত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য বলেন, 'দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এই ভাষায় কথা বলা যায় না।তৃণমূলের কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করতে হবে'। কাউন্সিলর পাল্টা দাবি, 'যাঁরা এই কথা বলছে, তাঁরা ইংরেজিটা কম বোঝেন। আমি যেটা বলতে চেয়েছি, সেটা বাংলা করলে দাঁড়ায়,বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রাণ নিয়ে গেলে সেই প্রাণও ছিনিয়ে নেয় অনেক সময়। প্রাণ চলে গেলে পাবলিক তাংদের মারধর করতে পারে। তাদের ক্ষোভের একটা বহিঃপ্রকাশ হতে পারে'।
তৃণমূল কাউন্সিলরের সাফ কথা ছিল, ওখানে সাংসদ বিধায়ক কাউকে দেখা যায় না। আর একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে আমি এই ধরনের কিছু লিখব, আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়নি। কোথাও জল জমলে বিজেপির লোক বলে দুয়ারে ভেনিস, দুয়ারে লন্ডন। তাই ওদের ভাষাতেই আমি বলেছি দুয়ারে ক্যালানি। তাঁরা মার খেয়ে গিয়েছে। এটা জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ'।