দিব্যেন্দু সরকার: ডেলিভারির পর পেটের মধ্যেই রয়ে গিয়েছিল গজ, তুলো। তা নিয়েই টানা প্রায় ৭মাস অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে মৃত্যু হল খানাকুলের বামুনখানার বাসিন্দা রমা পাখিরার। ঘটনায় আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে এবার বড়সড় প্রশ্ন উঠছে। রমার স্বামী পীযূস পাখিরার দাবি, গত ৮ জুন স্ত্রী রমাকে ডেলিভারি ও লাইগেশনের জন্য আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন তিনি। ৯ জুন সন্তান প্রসবের পর বাড়ি ফিরেই পেটে যন্ত্রনা অনুভব করেন তাঁর স্ত্রী। এর পর থেকে সমস্যা সমাধানের জন্য আরামবাগের বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
দফায় দফায় চিকিৎসকদের কাছে হাজির হন। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। রোগ নির্ণয় করতে পারেননি কেউই। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে কলকাতা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ৬দিন ভর্তি থাকার পর সেখান থেকেও রোগীকে সুস্থ বলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে বাড়িতে আসতেই ফের শুরু হয় অসহ্য পেটের যন্ত্রণা। এইভাবে প্রায় ৭মাস বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কাজ না হওয়ায় অবশেষে সরকারি পরিষেবার আশা ছেড়ে কলকাতার একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে স্ত্রীকে ভর্তি করেন পীযূস বাবু। সেখানে আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে সমস্যা। কয়েকদিন আগে সেখানেই ফের অপারেশন করে পেট থেকে বের করা হয় গজ ও তুলো। কিন্তু দীর্ঘদিন পেটের মধ্যে গজ তুলো থাকায় সেপটিকজনিত কারণে গত মঙ্গলবার ওই বেসরকারি নার্সিংহোমেই মৃত্যু হয় রমা পাখিরার।
ঘটনার পর মৃত গৃহবধূর স্বামী পীযূস ও তাঁর পরিবার সাহায্যের আশায় দ্বারস্থ হয় বিজেপি নেতৃত্বদের। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি সুশান্ত বেরা একটি সাংবাদিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিষয়টি সামনে আনতেই রীতিমতো উত্তেজনা ও নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে মহকুমা জুড়ে। এই ঘটনায় অবিলম্বে দোষী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগেই আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে শিশুবদলের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল আরামবাগের মানুষকে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই চিকিৎসায় এই চরম গাফিলতির ঘটনা সামনে আসায় আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বড়সড় গাফিলতি ফের সামনে আসছে। যদিও আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায়ের দাবি, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। পুলিসও তদন্ত চালাচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের পাশেই আছেন। তাঁর বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবে যথাযথভাবেই।