• পেটে গজ-তুলো! প্রসূতির মৃত্যুতে উত্তপ্ত আরামবাগ
    এই সময় | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, আরামবাগ: আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে সন্তান প্রসবের পর থেকেই পেটের মধ্যে শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। তারপর এখানে ওখানে ডাক্তার দেখিয়ে, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও রোগ কিছুতেই সারছিল না। শেষে কলকাতার একটি নামকরা বেসরকারি নার্সিংহোমে অপারেশন করিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন খানাকুলের বামুনখানার বাসিন্দা রমা পাখিরা। কিন্তু ফের পেটে যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় তাঁকে আবারও ভর্তি করা হয়েছিল কলকাতার সেই নার্সিংহোমে। গত মঙ্গলবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর জন্য আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজকেই দায়ী করছেন পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে রমার যখন সিজার হয়, সম্ভবত তখনই তাঁর পেটে গজ তুলোর টুকরো রয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁর শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়।

    কলকাতার নার্সিংহোমে অপারেশন করে পেট থেকে গজ-তুলো বের করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে সন্তান প্রসবের পরে রমা পাখিরা একাধিক জায়গায় চিকিৎসায় করিয়েছেন। একাধিক ডাক্তারকে। দেখিয়েছেন। তাঁদের একজনও এরকম দাবি করেননি। তা সত্ত্বেও অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায় বলেন, 'বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশও আলাদা করে তদন্ত করছে। যদি কারও গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

    রমার স্বামী পীযূষ পাখিরা জানিয়েছে, গত ৮ জুন সন্তান প্রসবের জন্য স্ত্রীকে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন। ৬ জুন সন্তান প্রসব করার পরে তিনি যথারীতি বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। আরামবাগের একাধিক চিকিৎসককে দেখানো হলেও তাঁরা রোগ সারাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন। সেখানে ৬ দিন ভর্তি থাকার পরে রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছে বলে রমাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে ফিরতেই ফের শুরু হয় অসহ্য পেটের যন্ত্রণা। এভাবে প্রায় ৭ মাস ধরে বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছে দৌঁড়ঝাঁপ করেও পেটের যন্ত্রণা না কমায় শেষে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে স্ত্রীকে ভর্তি করেন পীযূষ। সেখানে আলট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে, রমার পেটে গজ-তুলোর টুকরো আটকে রয়েছে।

    ওই নার্সিংহোমে অপারেশন করে রমার পেট থেকে গজ-তুলো বের করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পেটের মধ্যে গজ-তুলো আটকে থাকায় শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তারই জেরে মৃত্যু হয় রমা পাখিরার। পীযূশের অভিযোগ, আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের গাফিলতির জন্যই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য দোষী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। কয়েক দিন আগেই আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে শিশু বদলের অভিযোগকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই চিকিৎসায় গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায়, তা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

    আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি সুশান্ত বেরা বলেন, 'রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি কী করছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দিয়েছে তৃণমূল সরকার।' তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক স্বপন নন্দী বলেন, 'আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত করে দেখছে। বিজেপি অহেতুক এ নিয়ে জলঘোলা করছে।'

  • Link to this news (এই সময়)