ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি ও সোমেন পাল, গঙ্গারামপুর: রাতের আকাশে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দৃশ্যমান আগুনের গোলা ঘিরে ধোঁয়াশা কাটল না। বরং শুক্রবার দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর থেকে উল্কাপিণ্ড বলে দাবি করা কালচে সবুজ রঙের ‘পাথর’ উদ্ধার ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। প্রায় দু’কেজি ওজনের উদ্ধার হওয়া ওই পাথরটি হরিরামপুর থানায় রাখা হয়েছে। অনেকেই সেটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। এদিকে, উত্তরবঙ্গের আকাশে প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে যাওয়া আগুনের গোলাটি আসলে কী, তা নিয়ে শুক্রবারও দিনভর চর্চা চলে বিভিন্ন মহলে। সাধারণ মানুষের কৌতূহল মেটাতে সায়েন্স সেন্টারের বিজ্ঞানীরা নানা সম্ভাবনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ উত্তরের আকাশে যে ফায়ার বল বা আগুনের গোলা দেখা গিয়েছিল, তা উল্কাবৃষ্টি কিংবা স্পেস জাঙ্ক হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন। তবে এদিন হরিরামপুরের লঘুচর এলাকায় রাজেশ আলি নামে এক কৃষকের চাষের জমি থেকে উদ্ধার হওয়া প্রস্তরখণ্ডের সঙ্গে ওই মহাজাগতিক ঘটনার সম্পর্ক নেই বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ উল্কাপিণ্ড বা স্পেস জাঙ্ক যাই হোক না কেন, মাটিতে আছড়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে যে অভিঘাত হওয়ার কথা, এদিন প্রস্তরখণ্ডটি যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেখানে তেমন নমুনা মেলেনি। তাহলে উল্কাপিণ্ড দাবি করা ওই প্রস্তরখণ্ডটি কী হতে পারে?
বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। এদিন যাঁর জমি থেকে ওই প্রস্তরখণ্ডটি মিলেছে, সেই কৃষকের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে আকাশ থেকে একটি আলোকপিণ্ড আমার জমির আশপাশে পড়তে দেখি। কিন্তু রাতে আর খোঁজাখুজি করিনি। কৌতূহলের বশে এদিন সকালে জমিতে এসে বস্তুটি খুঁজে পাই। এরপরই গ্রামবাসীদের খবর দিই। বস্তুটি যেখানে পড়েছে, সেখানে অনেকটা গর্ত হয়েছে।
গঙ্গারামপুরের মহকুমা শাসক অভিষেক শুক্লা বলেন, হরিরামপুর থানা থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি, উল্কাপিণ্ডের মতো একটি পাথরের পিণ্ড উদ্ধার হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, মাটিগাড়ার উত্তরবঙ্গ বিজ্ঞান কেন্দ্রের ইনচার্জ ঋতব্রত বিশ্বাস বলেন, হরিরামপুরে প্রায় দু’কেজি ওজনের যে উল্কাপিণ্ড উদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে, আপাতভাবে তা অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। এটা ঠিক যে, আমাদের দেশে উল্কাপাতের জেরে অনেক বড় বড় হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রায় দু’কেজি ওজনের উল্কাপিণ্ড যদি সেকেন্ডে ৮০-৯০ কিমি গতিবেগে মাটিতে আছড়ে পড়ে, তার মারাত্মক অভিঘাত হবে। আকাশে আগুনের গোলা ধেয়ে যাওয়ার পরই বিকট শব্দ শোনা নিয়ে তাঁর দাবি, উল্কা বা স্পেস জাঙ্ক যাই হোক না কেন, বায়ুমণ্ডলের বাধা অতিক্রম করে যখন কোনও বস্তু সেকেন্ডে ৯০ কিমি গতিবেগে ধেয়ে যাবে, স্বাভাবিকভাবেই শব্দ উৎপন্ন হবে। শব্দের গতি যেহেতু আলোর চেয়ে কম, সেকারণে ফায়ার বলের মতো বস্তুটি চলে যাওয়ার পর শব্দ কানে এসেছে।