নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মহিষাদলে জলের দরে সোনার বিক্রির টোপ দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভাঙড় থেকে মূল অভিযুক্তকে পাকড়াও করল পুলিশ। ধৃতের নাম হাসেম শেখ। বাড়ি হাওড়ার শ্যামপুরে। ভাঙড়ে আত্মীয়বাড়িতে লুকিয়েছিল সে। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ এবং মহিষাদল থানার পুলিশের টিম হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃতকে হলদিয়া এসিজেএম কোর্টে তোলা হয়। এরআগে ওই ঘটনায় আরও তিনজন ধরা পড়েছে। সেইসঙ্গে অভিনব ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবহৃত পুলিশ স্টিকার সাঁটা একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে।
কম দামে সোনা বিক্রির টোপ দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রতারণার ঘটনা নতুন নয়। ভগবানপুর থানার অন্তর্গত নারায়ণদাঁড়ি গ্যাং এজন্য কুখ্যাত। ওই গ্যাংয়ের কাজকর্ম গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। কোলাঘাট, তমলুক, মহিষাদল, চণ্ডীপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়। অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের নানাভাবে লোভ দেখিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। তারপর তাঁর সঙ্গে আনা অর্থরাশি লুট করে নেয় গ্যাংটি। গত ২১ সেপ্টেম্বর মহিষাদল থানার গাড়ুঘাটা এভাবেই হাওড়ার শ্যামপুরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে জলের দরে সোনার বাট বিক্রির টোপ দিয়ে ডেকে এনে ৩০ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। শ্যামপুর থানার টেঠিখোলা গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদীপ সামন্ত এবং তাঁর বাবার সঙ্গে প্রায় সাত-আট বছর ধরে ধৃত হাসেম শেখের পরিচয় রয়েছে। হাসেমের বাড়ি শ্যামপুর থানার কাঁঠালিবাড় গ্রামে। হাসেম প্রদীপকে কম দামে সোনা বিক্রির অফার দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাসেম ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে নিয়ে মহিষাদল থানার গাড়ুঘাটায় পৌঁছন। সেখানে যাওয়ার পর হাসেম দু’জনকে ডেকে পাঠায়। তারা একটি প্রাইভেট গাড়িতে এসে সোনা দেখায়। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর প্রদীপ সামন্ত সোনা কেনার আগ্রহ দেখান। ২১ 0তারিখ প্রদীপ ৩০ লক্ষ টাকা সঙ্গে করে হাসেমকে নিয়ে শ্যামপুর থেকে একটি গাড়িতে গাড়ুঘাটায় পৌঁছে যান।
প্রদীপবাবু ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে গাড়ুঘাটায় পৌঁছনোর আগেই সেখানে আগে থেকে হাজির ছিল তপন বেরা নামে এক দুষ্কৃতী। ওই দুষ্কৃতী ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে জোর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওই ব্যবসায়ী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে টানাহেঁচড়া চলে। তখনই পুলিশ লেখা গাড়িতে সেখানে পৌঁছে যায় সবং থানার আদাসিমলা গ্রামের প্রশান্ত দাস নিমকিমোহন গ্রামের তাপস বর্মণ। একেবারে পুলিশি কায়দায় ফাইবারের লাঠি নিয়ে তারা ওই ব্যবসায়ীর দিকে তেড়ে যায়। তিনি হকচকিয়ে প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়েন। ঘটনাস্থল থেকে ৩০ লক্ষ টাকা সহ তপন বেরা এবং হাসেমকে গাড়িতে তুলে চম্পট দেয় নকল পুলিশের টিম। ঘটনার দু’দিন পরই পুলিশ তপন বেরাকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি মহিষাদল থানার উত্তর কাশিমনগরে। তার বিরুদ্ধে অতীতেও অনেক চুরি, ছিনতাইয়ের কেস হয়েছে। বেশ কয়েকবার ধরাও পড়েছে। তার জিম্মা থেকেই ২৭ লক্ষ টাকা ও ১২টি গোল্ডেন কালারের বাট উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া কয়েকদিন আগে সবংয়ের প্রশান্ত ও তাপস ধরা পড়েছে। এবার ব্যবসায়ীর সঙ্গে বন্ধুত্বকে ঢাল করে প্রতারণায় মাস্টার মাইণ্ড হাসেম শেখকেও পাকড়াও করল পুলিশ।