• বাংলাদেশে ‘ছায়ানট’ ধ্বংসে ব্যথিত শান্তিনিকেতন, প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিল
    বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বোলপুর: ওপার বাংলা ও এপার বাংলার ভাষাই যে শুধু এক তা নয়, দু’ পারের সংস্কৃতিও এক সুতোতে বাঁধা। আর সে সুতোর একদিকে রবীন্দ্রনাথ ও অপরদিকে নজরুল। সেই রবীন্দ্রনাথের ছবিই পুড়িয়ে দেওয়া হল অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে। ছারখার করে দেওয়া হল সে দেশের রবীন্দ্র সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ‘ছায়ানট’। মাটিতে আছড়ে ফেলা হল প্রখ্যাত শিল্পীদের ব্যবহৃত তবলা, হারমোনিয়াম সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। পুড়িয়ে দেওয়া হল কবিগুরুর ছবি ও বই। এই ঘটনায় মর্মাহত শান্তিনিকেতন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়ে মোমবাতি মিছিল করেছে শান্তিনিকেতনের খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি।

    প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সনজিদা খাতুন এবং তাঁর সহযোদ্ধারা মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘ছায়ানট’। জীবনের দীর্ঘ সময় সনজিদা কাটিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। মূলত রবীন্দ্র-সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ থেকেই তিনি শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গানেই খুঁজে বেড়াতেন আত্মপরিচয়। কবিগুরুকে নিয়ে বহু বই ও গানের অ্যালবাম রয়েছে তাঁর। বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাধনা এবং তার প্রচার-প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দেশিকোত্তম› প্রদান করা হয় সনজিদা খাতুনকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র ছায়ানটের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। অথচ, সেই ছায়ানটই ধ্বংস করে দিল ধর্মান্ধরা। জ্বালিয়ে দেওয়া হল সনজিদা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিও। টিভির পর্দায় তা দেখে গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে আসছে ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা বিশ্বভারতীর পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের। 

    সুপ্রিয়াবাবু জানান, সনজিদাদির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। আমি নিজেও ছায়ানটে গিয়েছি। বহু পরিশ্রম ও কষ্টে তিনি এই ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অথচ যেভাবে তা ধ্বংস করে দিল, এর থেকে নিন্দার আর কিছু হতে পারে না। তাঁর সংযোজন, ছায়ানটের সঙ্গে দুই বাংলার সঙ্গীতশিল্পীদের আবেগ জড়িয়ে আছে। আগুনের লেলিহান শিখা সেই আবেগকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। দেশটা একেবারে উচ্ছন্নে চলে গিয়েছে। নিজেদের ইতিহাসকেই ধ্বংস করতে বসেছে। 

    খোয়াই সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি সাহিত্যের উপর যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ছায়ানটে রবীন্দ্রনাথ, লালনের ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু বাদ্যযন্ত্র। যারা এই ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে, ইতিহাস তাদের কোনওদিন ক্ষমা করবে না। আমরা চাই বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক। দুই দেশের সুসম্পর্ক যাতে বজায় রাখার জন্য সে দেশের সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষক কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশকে বড্ড কাছের বলে মনে করতাম। এখন ওই দেশটার প্রতি কোনও ভালবাসা আর আমাদের নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষকে যেভাবে হত্যা করছে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরে দিচ্ছে, এটা কোনও সভ্য দেশে হতে পারে না। যেভাবে মানবতাবাদের উপর উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ চেপে বসেছে, সেখানে ওই দেশটার সম্পর্কে আর ভালো কিছু বলতে ইচ্ছা করে না।  রবীন্দ্র অনুরাগীদের মতে, রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে বাংলা সংস্কৃতি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু সেই রবীন্দ্রনাথের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে সবরকম ভাবে সচেষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদীরা। এই আক্রমণ ছায়ানটের উপরেই শুধু নয়, এই আক্রমণ দুই বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উপরে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)