• হাওড়া শহরে লক্ষাধিক টোটো চললেও রেজিস্ট্রেশনের আবেদন মাত্র ১৬ হাজার
    বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যজুড়ে চলছে টোটো রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ায় এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া না মেলায় সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছে রাজ্য পরিবহণ দপ্তর। তারপরও টোটোর মালিকদের রেজিস্ট্রেশন করানোর আগ্রহ কতটা দেখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। কারণ, বিষয়টি নিয়ে একাধিক বিভ্রান্তি জারি রয়েছে। হাওড়া শহর ও সংলগ্ন এলাকার চিত্রটা দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, হাওড়া শহর সহ ডোমজুড়, সাঁকরাইল, বালি-জগাছা মিলিয়ে এক লক্ষেরও বেশি টোটো চলে। সেই হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন এখনও ২০ শতাংশ পার করেনি। 

    গত ১০ অক্টোবর থেকে রাজ্যে টোটো রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করেছে পরিবহণ দপ্তর। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় এখনও পর্যন্ত ১৬ হাজার ১৭৪ জন রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩০০ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছে আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তর। তারা জানিয়েছে, রাজ্যে মোট ১৭৬টি নির্মাতা সংস্থাকে ই-রিকশা তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সংস্থাগুলির তৈরি ই-রিকশায় আলাদা আলাদা ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর থাকে। হাওড়া ও হুগলিতে রয়েছে এমন ২৫টি সংস্থা। নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও ই-রিকশা অনুমোদিত এসব সংস্থা থেকে কেনা হলে তার রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে হবে ‘বাহন’ পোর্টালে। এর জন্য খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তবে এই প্রক্রিয়া একবার সম্পন্ন হওয়ার পর যে নম্বরপ্লেট মিলবে, তা কার্যকর থাকবে আজীবন। অনুমোদিত সংস্থার তালিকায় নেই, এরকম সমস্ত টোটোর রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে হবে টিটিইএন পোর্টালে। সেখানে খরচ মাত্র ১৬৪৫ টাকা। তা  জমা দিয়ে মালিক বা চালক পাবেন একটি অস্থায়ী এনরোলমেন্ট নম্বর, সঙ্গে কিউআর কোড যুক্ত স্টিকার। এরপর পুরসভা, পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় নির্ধারিত হবে সেটির রুট। তবে এক বছর পর এই টোটো ই-রিকশায় রূপান্তরিত করা বাধ্যতামূলক।

    টোটো ইউনিয়নগুলির দাবি, দুই ধরনের পোর্টাল ও নির্দেশিকা থাকায় বিভ্রান্তি বেড়েছে। হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণের এক আধিকারিক বলেন, ‘অনেক ই-রিকশার মালিক বাহন পোর্টালে আবেদনের যোগ্য হলেও কম খরচের কথা ভেবে টিটিইএন পোর্টালে আবেদন করছেন। ফলে বাহন পোর্টালে আবেদন বাড়ছে না। আর এতসব বিভ্রান্তির কারণে সার্বিকভাবেও আবেদন কম আসছে।’ হাওড়া টোটো ইউনিয়নের সেক্রেটারি সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অধিকাংশ ই-রিকশাই সরকার অনুমোদিত সংস্থার তৈরি। কিন্তু এককালীন ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে ভেবে রেজিস্ট্রেশন থেকে পিছিয়ে আসছেন বহু চালক। অনেকে আবার বলছেন, এক বছর পর যদি টোটো বাদ দিতেই হয়, তাহলে এখন রেজিস্ট্রেশন করে কী লাভ?’ হাওড়া শহরের ভিড়ভাট্টায় বহু টোটো এখন যাত্রী নয়, মালপত্র বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাঁদের প্রশ্ন, ‘ধার করে টোটো কিনেছি। লাভ নেই। ঋণ শোধ হওয়ার আগেই রেজিস্ট্রেশনের টাকা দেব কোথা থেকে?’ হাওড়া সিটি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তা জানান, ‘সময়সীমা শেষ হলে রেজিস্ট্রেশনবিহীন টোটোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে পরিবহণ দপ্তরের একাংশের কথায়, সামনেই রয়েছে বিধানসভা ভোট পর্ব। তাই আপাতত এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি গতি আসবে বলে মনে হয় না।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)