• তন্ত্রসাধনার নামে ৮ ভরি গয়না সহ লক্ষ টাকা হাতাল সেন্টারের আয়া, ব্রেন স্ট্রোক ছেলের, মাকে তান্ত্রিকের কাছে যাওয়ার টোপ পরিচারিকার
    বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই, ব্রেন স্ট্রোক সারিয়ে দেবে তান্ত্রিক।’ এই বলে এক বৃদ্ধার আট ভরি সোনার গয়না ও লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিল আয়া সেন্টারের কর্মী। প্রত্যন্ত কোনও গ্রামের ঘটনা নয়। শহরের বুকে দক্ষিণ দমদমের আট নম্বর ওয়ার্ডে ঘটেছে প্রতারণার বিস্ময়কর ঘটনাটি। বৃদ্ধা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি কাউন্সিলারেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। আয়া সেন্টারের কর্মী এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। বৃদ্ধা গয়না ও টাকা ফেরত পেতে তার বাড়ি গিয়েছিলেন। অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে কোনও কথা বলতে অস্বীকার করে অভিযুক্ত।

    দক্ষিণ দমদম পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের রাষ্ট্রগুরু অ্যাভিনিউয়ে থাকেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর নাম সুচিতা বোস। স্বামী ব্রজগোপাল বোস প্রয়াত হয়েছেন। সুচিতাদেবীর পুত্র আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্রেন স্ট্রোকে। চিকিৎসাধীন থাকার পর বর্তমানে কিছুটা সুস্থ। সুচিতাদেবী অশক্ত হয়ে পড়ায় ছেলের দেখভালের প্রয়োজনে বিশরপাড়ার একটি আয়া সেন্টার থেকে একজন কাজের মহিলাকে নিযুক্ত করেছিলেন। সেন্টারের সেই মহিলা কর্মীর বাড়ি মাইকেলনগরে। ছেলের অসুস্থতার কারণে মানসিক অবসাদে ছিলেন বৃদ্ধা। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেন্টার থেকে আসা ওই পরিচারিকা তাঁকে তান্ত্রিকের কাছে যেতে প্ররোচিত করে। ‘বালিগঞ্জের এক তান্ত্রিক এমন বহু সমস্যার সমাধান করেছেন,’ বলে জানায়। তারপর তান্ত্রিকের থেকে ওষুধ এনে দেবে বলে সুচিতাদেবীর কাছ থেকে নেয় এক লক্ষেরও বেশি টাকা। তারপর এসে জানায়, ছেলেকে সম্পূর্ণ সুস্থ করতে টানা ৪১ দিন সুচিতাদেবীদের বাড়ির সমস্ত গয়না দেবতার কাছে গচ্ছিত রাখতে হবে। পুজো করতে হবে। গয়না ঘরের মধ্যেই থাকবে। ফলে আশঙ্কার কিছু নেই। অবসাদে ভুগতে থাকা বৃদ্ধা সুচিতাদেবী ছেলের অসুস্থতা থেকে মুক্তি আশায় সমস্ত গয়না বের করে দেন। তা থেকে কিছু গয়না মাটির পুতুলের মধ্যে ভরে দেবতার সিংহাসনের নীচে রাখে পরিচারিকা। কিছু অলঙ্কার ঘরের বারান্দায় থাকা টবের মাটির মধ্যে ভরে রাখে। আর বাকিগুলি একটি ঘটের মধ্যে ঢুকিয়ে তাতে চাল রেখে গঙ্গাজল ছড়িয়ে অসুস্থ ছেলের শয্যার নীচে রেখে দেয়।

    সুচিতাদেবী পুলিশকে জানান, ৪১ দিন পর পরিচারিকা আচমকা আসা বন্ধ করে দেয়। আর তিনি ঘট, টব ও সিংহাসনের নীচে রাখা পুতুল খুলে দেখেন একটা গয়নাও নেই। তারপর নিজেই অনেক কষ্ট করে পরিচারিকার বাড়ি যান। গয়না-টাকা ফেরত চান। কিন্তু অসুস্থতার ভান করে পরিচারিকা চুপ থাকে। কোনও কথা বলেনি। তার মেয়েও সুচিতাদেবীদের বাড়ি যেত। সেও কথা বলতে অস্বীকার করে। অভিযোগ শোনার পর, কাউন্সিলার অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘প্রতারকরা বয়স্ক মানুষদের অসহায়তা ও সমস্যার সুযোগ নিচ্ছে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কাজের লোক রাখার আগে সকলেরই সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।’
  • Link to this news (বর্তমান)