পাঁচ বছর আগে কৃষি বিলের প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে নিশিযাপন করেছিলেন তৃণমূলের সাংসদরা। আর গত কাল বিকশিত ভারত-জি রাম জি বিলটি রাজ্যসভায় মধ্যরাতে পাশ হওয়ার পরে ফের রাতভর সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখালেন দলের রাজ্যসভার সাংসদরা। এ বার তৃণমূলের সঙ্গে রাত দেড়টা পর্যন্ত ছিলেন ডিএমকে-র রাজ্যসভার সাংসদেরা, আপ-এর সন্দীপ পাঠক এবং কংগ্রেসের ইমরান প্রতাপগঢ়ী, শক্তিসিন গোহিল। কনকনে ঠান্ডায় রাত ভোর করলেন নাদিমুল হক, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা ঠাকুর, সাকেত গোখলে, সাগরিকা ঘোষরা।
গত বারের মতো এ বারও রাতজাগা ধর্নায় রইলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন এবং দোলা সেন। ডিএমকে-র তিরুচি শিবা গত বার ভোরবেলা ইডলি পাঠিয়েছিলেন বিনিদ্র তৃণমূলের সাংসদদের জন্য। এ বারেও সকালে ইডলি পাঠান তিনি! লেপ-কম্বল এবং গরম পোশাকের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল বাইরে থেকে। দোলার নেতৃত্বে গান গেয়েও নিজেদের চাঙ্গা রেখেছেন সাংসদেরা। রাতে তাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে আনা খাবার ভাগ করে খেয়েছেন। কংগ্রেসের রেণুকা চৌধরি এবং জয়া বচ্চনও বাড়িতে রান্না করা খাবার পাঠিয়েছিলেন। আজ সকালে ধর্নাস্থলে এসেছিলেন জয়াও। তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তাঁকেও গাইতে শোনা গেল, ‘ধনধান্য পুষ্পভরা…।’ সকালে লোকসভার সাংসদেরাও শতাব্দী রায়ের নেতৃত্বে এসে যোগ দেন ধর্নায়। বন্দে মাতরম্ গেয়ে ধর্না শেষ হয়।
প্রতিবাদে আজ তৃণমূল সাংসদেরা অধিবেশন কক্ষে ঢোকেননি। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এবং লোকসভার স্পিকারের ডাকা শেষ দিনের আনুষ্ঠানিক চা চক্রেও যাননি। সাংসদদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘মনরেগার হত্যা’, ‘গান্ধীকে যে ভাবে মেরেছিলে, সে ভাবে মনরেগাকে হত্যা কোরো না’। ভোরে ঋতব্রতের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, ধোঁয়াশায় ঢাকা সংসদ চত্বর। তাঁদের টাঙানো গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির নীচে কম্বল মুড়ি দিয়ে ভোরে পালা করে শুয়ে নেন কয়েক জন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, ঠান্ডা লাগানো চলবে না। সাংসদদের খোঁজ নিতে বেশ কয়েক বার ফোন করেন তিনি। ডেরেকের কাছে খবর নেন, সবার শরীর ঠিক আছে কি না। দিল্লির দূষণের জন্যও সাংসদদের সতর্ক করেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতেও পরামর্শ দেন।
ধ্বনিভোটে ‘জি রাম জি’ বিল রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার আগে-পরে অধিবেশন কক্ষে তুমুল হইচই করেন বিরোধীরা। পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ড হাতে তৃণমূলের মমতা ঠাকুর এবং মৌসম নূর চেয়ারম্যানেরআসনের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করলে বিরোধী বেঞ্চের সামনে মার্শালরা দাঁড়িয়ে পড়েন। তখন ঘুরপথে, ট্রেজ়ারি বেঞ্চের দিক দিয়েএগোতে গিয়েও বাধা পান তাঁরা। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে দ্রুত বক্তৃতা শেষ করতে তাড়া দেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। পরে রসিকতার ঢঙে রিজিজু বলেন, “আমি ভাবছিলাম, তৃণমূলের সাংসদেরা বিজেপিতে যোগ দিতে আসছেন!”