‘মমতা দিদি’কে আরও লগ্নির আশ্বাস শিল্পমহলের, পরিকাঠামো নিয়ে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রীও
বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যের নামজাদা শিল্পপতি, যাঁদের ভিন রাজ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে বিনিয়োগের জাল, তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরলেন ‘দিদি’ হয়েই। বৃহস্পতিবারের শিল্পসভায় শিল্পপতিরা যেমন তাঁকে ‘মমতা দিদি’ হিসেবে স্তুতিতে ভরিয়ে দিলেন, ‘রিটার্ন গিফ্ট’ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের দিলেন শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও প্রশাসনের আশ্বাস।
এদিনের বাণিজ্য সম্মেলনে শিল্পপতি হিসেবে প্রথম বক্তা ছিলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তিনি জানান, তাঁর আরপি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপ আগামী দিনে মোট ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে। এর মধ্যে একটি ব্যাটারি পাম্প স্টোরেজ তৈরি হবে, যেখানে বিনিয়োগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ হাজার মেগাওয়াট আওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই মাপের প্রকল্প দেশে প্রথম, দাবি করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, হুগলির উত্তরপাড়ায় তাঁদের হাতে সাড়ে তিনশো একর জমি তৈরি আছে ওই প্রকল্পের জন্য। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেন, এই তৎপরতাই এই বাংলায় বিনিয়োগের অন্যতম সদর্থক দিক। তাঁর কথায়, স্বচ্ছতা আর একেবারে তৃণমূল স্তরে নেমে কাজের পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে প্রশাসন। তাই আমরা যেমন এখানে বসবাস করে খুশি, ব্যবসা চালিয়েও আনন্দিত। শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া তাঁর বক্তব্যে ‘মমতা দিদি’কে জানিয়ে দেন, গত আমলে অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপ বাংলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। সেই যাত্রা যে এখনই থামার নয়, তা বুঝিয়েছেন একাধিক প্রকল্পের ঘোষণায়। আইটিসি চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরিও মমতা দিদিকে বলেন, ভোগ্যপণ্য থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ—সবক্ষেত্রেই এরাজ্যে কারখানার সংখ্যা ও উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। এমনকি রাজারহাটে যে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র শুরু হয়েছিল, তারও কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
শিল্পের যেকোনও সমস্যায় তাঁদের দিদি যে সবসময় পাশে থাকেন, তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বুঝিয়েছেন টিটাগড় ওয়াগনসের এমডি উমেশ চৌধুরী। উমেশবাবু বলেন, জায়গার অভাবে আমাদের ওয়াগন কারখানায় মাল যাতায়াতে সমস্যা ছিল। তার জেরে উৎপাদনও বাড়ানো যাচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই সমস্যার সমাধান করেছেন।
এদিন তাঁর বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলা এমন এক রাজ্য, যেখানে বেঁচে থাকার খরচ অনেক নয়। তা মাঝারি। এখানে কোনও কর্মদিবস নষ্ট হয় না। আমাদের কর্মী ও শ্রমিকরা আমাদের সম্পদ। তাঁর আমলে ৪০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১০ লক্ষ ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কারণেই যে বিনিয়োগ আসে, তা বোঝাতে একাধিক প্রকল্পের উদাহরণ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বানতলা চর্মনগরীতে ৩৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প থেকে শুরু করে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার লগ্নির কথা বলেন তিনি। আনেন দেউচা পাচামি প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, এখানে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়লা উত্তোলন শুরু হলে আগামী প্রজন্মে বিদ্যুতের কোনও সমস্যা থাকবে না। রেল হোক বা সড়কপথ—পরিকাঠামোয় যে কোথাও ঘাটতি নেই, তা এদিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বুঝিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পমহলও জানিয়ে দিয়েছে, তারা ‘নিজের ঘর’ বাংলায় আরও লগ্নির জন্য প্রস্তুত।