• 'SIR' নিয়ে কী বলেন মোদী, তারই অপেক্ষায় বঙ্গ-বিজেপি
    এই সময় | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: নতুন ভোটার তা‍লিকায় আদৌ নাম থাকবে তো, ২০০২–এর ভোটার তালিকার সঙ্গে লিঙ্ক না থাকলে শুনানিতে কী ব্যাখ্যা দেবেন, তা নিয়ে বঙ্গের মতুয়া সমাজের একাংশের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ঠিক সেই আবহে আজ, শনিবার মতুয়া প্রভাবিত রানাঘাটের তাহেরপুরে জনসভা করতে আসছেন প্রধানম‍ন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকে তিনি মতুয়াদের কী ভাবে আশ্বস্ত করেন, আপাতত তারই অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল। বিশেষত, বঙ্গ–বিজপি। রানাঘাটের তাহেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থ‍ল শুধু মতুয়া প্রভাবিত নয়, সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্তও ২০–২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। ফলে উত্তপ্ত বাংলাদেশ সম্পর্কেও প্রধা‍নমন্ত্রী কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকে রাজনৈতিক শিবিরের পাশাপাশি কূটনৈতিক মহল নজর রাখছে।

    বাংলার ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা ‘সার’ শুরুর পরে এই প্রথম রাজ্যে আসছেন প্রধা‍নমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ হলো, জনসভা করার জন্য তিনি এমন জায়গা বেছে নিয়েছেন যেখা‍নে ‘সার’–এর কোপ পড়ার উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

    রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় মতুয়া ভোটারদের প্রাধান্য। তাহেরপুরও তার মধ্যে পড়ে। মতুয়াগড় হিসেবে পরিচিত বনগাঁর ঠাকুরনগরও সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ফলে রানাঘাট এবং বনগাঁর মতুয়ারা যে কান খুলে আজ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

    সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, নাগরিকত্ব না পেলে ভোটার তালিকায় কারও নাম তোলা যাবে না। তারই রেশ ধরে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ক’দিন আগে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের খাতায় নো–ম্যাপিং–এর মধ্যে প্রচুর মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের নাম আছে। তাঁদের কাছে কমিশনের নির্ধারিত নথিগুলিও ‍নেই।’ তাঁদের যে সিএএ–তে অাবেদন করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই, বিজেপির তরফে ঠারেঠোরে একাধিকবার সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিএএ–তে আবেদন করে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া যে দীর্ঘ তা এতদিনে বিলক্ষণ টের পেয়ে গিয়েছে মতুয়া সমাজ। কারণ, যে মতুয়ারা ‘সার’ ঘোষণার অনেক আগেই সিএএ–তে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের কেউই এখনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে ভারতীয় নাগরিকের স্বীকৃতি পাননি। ফলে ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কতজন ‘নো ম্যাপিং’ মতুয়া নতুন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

    প্রধানমন্ত্রী বঙ্গ–সফরের আগের দিন শুক্রবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও মতুয়াদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর দাবি, ‘একজন হিন্দুর নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে না। যাঁরা সব খুইয়ে এ দেশে এসেছেন, এই মাটিতে তাঁদের অধিকার আমাদের মতোই।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, শুধু শমীকের আশ্বাসে চিঁড়ে ভিজবে না। মতুয়া সমাজের সমর্থন অটুট রাখতে হলে প্রধা‍নমন্ত্রীকে শনিবার একই কথা আরও জোরের সঙ্গে বলতে হবে। যদিও আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি শমীক এ দিন বাং‍লার উদ্বাস্তু সমাজকে সিএএ–তে আবেদন করার কথা ফের একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তাহেরপুরের সভা থেকে প্রধা‍নমন্ত্রী বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারেন। কারণ, ভারতে অনুপ্রবেশ সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে।

    শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বঙ্গ–সফর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি পোস্ট করেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সভা আর রাজনৈতিক সভার কথা আলাদা ভাবে জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে দ্বিতীয় পোস্টটি রাজনৈতিক। সেখানে তিনি লিখেছে‍ন, ‘২০ ডিসেম্বর দুপুরে আমি রানাঘাটে বিজেপির জনসভায় ভাষণ দেব। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের বহু জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। তবে একইসঙ্গে রাজ্যের সর্বক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের কারণে তাঁরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তৃণমূলের লুটপাট ও ভীতিপ্রদর্শন সব সীমা অতিক্রম করেছে। সে কারণে আজ বিজেপিই মানুষের একমাত্র আশা-ভরসা।’ জবাবে তৃণমূলের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, মান-কি-বাতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বাংলা কষ্টে আছে। আর সেটা আপনার কারণেই।’ প্রশাসনিক সভার বিষয়ে মোদী জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ সংক্রান্ত দুটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘এই প্রকল্প কলকাতা ও শিলিগুড়ির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে।’ মোদীর সঙ্গে এ দিন প্রশাসনিক মঞ্চে হাজির থাকবেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করিও।

  • Link to this news (এই সময়)