সূচিতে ছিল ৪৫ মিনিট তাহেরপুরের সভায় বক্তব্য পেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য গোড়া থেকেই গোল বাধে তাহেরপুরে জনসভায়। শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে অডিয়ো বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মাত্র ১৬ মিনিটের ওই বক্তব্যে উন্নয়ন থেকে প্রকল্প, অনুপ্রবেশ থেকে দুর্নীতি, বিহার ভোটের ফল থেকে ডবল ইঞ্জিন সরকার, এসআইআর থেকে ত্রিপুরার সঙ্গে তুলনা, সবই ছুঁয়ে গেলেন। তা সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিতে জেতানোর ডাকও দিলেন।
কয়েকদিন আগে বিহারের বিধানসভা ভোটে ব্যাপক জয় পেয়েছে বিজেপি-জোট। সেই সময়েই বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মোদী যা বলেছিলেন, তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘বিহার থেকে গঙ্গার বয়ে এসে বাংলায় পৌঁছয়।’ এ দিনের বার্তাতেও সেই কথাটা ফের বলেছেন মোদী। বিহারের জঙ্গলরাজের সঙ্গে বাংলার জঙ্গলরাজের তুলনা টেনে মোদীর দাবি, ‘এখন বাংলার কোণায় কোণায় শোনা যাচ্ছে বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।’
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের উন্নতির জন্য টাকা, ইচ্ছে বা প্রকল্প কোনওটারই কমতি নেই। তাহলে কাজ হচ্ছে না কেন? কাজ না হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। কমিশন ও কাটমানির জন্য অনেক প্রকল্প আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। এই প্রসঙ্গ টেনেই মোদীর তোপ, ‘তৃণমূল মোদীর বিরোধিতা করুক, বিজেপির বিরোধিতা করুক। বার বার করুক। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না বাংলার উন্নতির বিরোধিতা কেন করা হচ্ছে।’ এই অবস্থা পাল্টে ফেলার জন্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার ডাক মোদীর। তাঁর মুখে ফের শোনা গেল ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব।
বাংলায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে বরাবর সরব হয়েছে বিজেপি। সেই একই সুর শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর গলায়। তাঁর তোপ, ‘অনুপ্রবেশকারীদের সুবিধার জন্য তৃণমূল এসআইআর-এর বিরোধিতা করছে।’ তিনি তুলে এনেছেন ত্রিপুরার প্রসঙ্গ। নিশানায় এনেছেন বামেদের। ত্রিপুরা ও বাংলায় আগে বাম সরকার ছিল। মোদীর দাবি, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার এসেছে বলে উন্নতি হচ্ছে। বাংলায় বামেরা চলে যাওয়ার পরে তৃণমূল বামেদের সব খারাপ গুণ আত্মস্থ করেছে এবং আরও বাড়িয়ে তুলেছে, এমনটাই অভিযোগ মোদীর। আজ যেখানে মোদীর সভা ছিল, সেই তাহেরপুরের পুরসভা বামেদের দখলে। গোটা রাজ্যে এই একটি পুরসভাতেই ক্ষমতায় রয়েছে বামেরা।
এ দিন বক্তব্যে কার্যত ২০২৬-এর ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, ‘বাংলায় একবার বিজেপি সরকার এনেই দেখুন, কত দ্রুত উন্নতি হয়...।’
জয় নিতাই বলে এ দিন ভাষণ শুরু করেছেন তিনি। নদিয়ার ইতিহাস ছুঁয়ে হরিনাম সংকীর্তনের প্রসঙ্গ এনেছেন মোদী। তার সঙ্গেই জুড়েছেন মতুয়া সমাজের কথা। হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং বড়মা-র কথা স্মরণ করে বাংলায় মতুয়াদের গুরুত্বের কথাও উঠে এসেছে মোদীর মুখে। কয়েকদিন আগেই বন্দেমাতরমের ১৫০ বছর পূর্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সংসদে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধন করায় তুমুল শোরগোল হয়েছিল। এ দিনও বন্দেমাতরম এবং সেটির স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখে। তবে এ দিন ‘বঙ্কিমবাবু’ বলেই সম্বোধন করেছেন তিনি।
তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সভাস্থলে পৌঁছনোর সময়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী মারা গিয়েছেন। বক্তব্য রাখার সময়ে তাঁদের পরিবারের উদ্দেশে শোকবার্তা জানান মোদী। পশ্চিমবঙ্গের যে যে প্রান্তিক এলাকা হয়েছে, সেখানেও যাতে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা পৌঁছয়, সেই কারণেই জাতীয় সড়কের চার লেনের ২টি প্রকল্প করা হয়েছে বলে জানালেন মোদী। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাতায়াত আরও সুবিধা হবে। রাজ্যের ব্যবসা ও পর্যটনের উন্নতির কথা মাথায় রেখেই এই কাজ হয়েছে বলে জানালেন তিনি।