রাজধানীর ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন ৭ হাতি, অসমে লাইনচ্যুত ইঞ্জিন ও ৫ কামরা
বর্তমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশেষ সংবাদদাতা, গুয়াহাটি : লাইনে উঠে এসেছে হাতির পাল। নজরে পড়ার পরই একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন লোকো পাইলট। ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। দ্রুতগতির রাজধানী এক্সপ্রেস আছড়ে পড়ল গজরাজদের উপর। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল সাতটি হাতি। জখম আরও একটি। অসমের হোজাই জেলায় শনিবার ভোররাতের এই দুর্ঘটনায় লাইনচ্যুত হয় সাইরাং-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও পাঁচটি বগি। তবে যাত্রীরা সবাই সুরক্ষিত বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার জেরে অসমের বিভিন্ন জেলা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয়েছে ৯ টি ট্রেন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্ব লামডিং ডিভিশনের যমুনামুখ-কামপুর সেকশনে শনিবার ভোররাত ২.১৭ টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। নগাঁও ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার সুভাষ কদম বলেছেন, হোজাই জেলার চাংজুরাই এলাকায় হাতির পালকে ধাক্কা মারে দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনার পরই সেখানে পৌঁছন কদম সহ বনবিভাগের আধিকারিকরা। রেল ও বন দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলটি নির্দিষ্টভাবে হাতির করিডর হিসেবে চিহ্নিত নয়। লোকো পাইলট জরুরি ব্রেক কষেন। কিন্তু হাতির দল ট্রেনের দিকে ছুটে আসে। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা সফল হয়নি। যদিও ‘হাতি বন্ধু’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা ডুলু বোরার দাবি, আগাম সতর্কতাসূচক ব্যবস্থা থাকলে ওই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হত। এই এলাকা হাতির করিডর হিসেবে চিহ্নিত নয় ঠিকই। কিন্তু সেখানে হাতির আনাগোনা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁর অভিযোগ, দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বিন বিভাগ ও রেলের সমন্বয়ের অভাব।
উত্তর পূর্ব রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা জানান, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতে প্রায় ৬৫০ জন যাত্রী ছিলেন। যাত্রীরা সকলেই সুরক্ষিত রয়েছেন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই রিলিফ ট্রেন পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে পৌছন ডিভিশনের আধিকারিকরা। লাইনচ্যত কামরাগুলি আলাদা করার পর ট্রেনটি গুয়াহাটিতে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় জখম হাতি শাবকের চিকিৎসা চলছে। জানা গিয়েছে, ওই শাবকটির অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কের কাছে বন্যপ্রাণ পুনর্বাসন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য হাতিটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, নিহত হাতিগুলির মধ্যে তিনটি শাবক ও চারটি পূর্ণবয়স্ক। তিনি বনবিভাগকে ঘটনার তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন।