• রেলের জমি বাণিজ্যিক ব্যবহারে বেনিয়ম! রাজস্ব ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকার, উল্লেখ ক্যাগ রিপোর্টে
    বর্তমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: রেলের বিভিন্ন জমির বাণিজ্যিক ব্যবহারে বেনিয়ম হয়েছে অন্তত কয়েকশো কোটি টাকার। সংসদে পেশ করা রিপোর্টে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে ক্যাগ। তারা জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘কমার্শিয়ালে’র পরিবর্তে ‘রেসিডেনসিয়াল’ এরিয়ার ‘সার্কেল রেট’ নেওয়া হয়েছে বরাত প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ডেভেলপারের কাছ থেকে। ফলে সেইসব জমির অবমূল্যায়ন (আন্ডার-ভ্যালুয়েশন) হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ক্যাগ রিপোর্টে স্পষ্টই উল্লেখ করা হয়েছে, এহেন রেট চূড়ান্ত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমোদনও দিয়েছে রেলমন্ত্রকের আওতাভুক্ত সংস্থা আরএলডিএ (রেলওয়ে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)। স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’র মতো গালভরা তত্ত্ব নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে। যে তিনটি জায়গায় রেলের জমি নিয়ে এহেন আর্থিক গরমিলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ঘটনাচক্রে তার প্রতিটিই বিজেপি শাসিত রাজ্যে অবস্থিত। দিল্লির অশোক বিহার, উত্তরপ্রদেশ কানপুরের গয়ালতোলি এবং উত্তরপ্রদেশ বেরিলির সহমতগঞ্জ। 

    দিল্লির অশোক বিহারে রেল জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৭৬০ বর্গমিটার। কানপুরের গয়ালতোলিতে ৭৪২ বর্গমিটার এবং বেরিলির সহমতগঞ্জের জমির পরিমাণ ৩ হাজার ২৭৯ বর্গমিটার। সংসদে পেশ করা রিপোর্টে ক্যাগ জানিয়েছে, ওই জমির বাণিজ্যিকরণ হত ‘কমার্শিয়াল’ উদ্দেশ্যে। ‘রেসিডেনসিয়াল’ নয়। অথচ রেট নেওয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কমের ‘রেসিডেনসিয়াল’ দর নেওয়া হয়েছে। ফলে জমির অবমূল্যায়ন হয়েছে মোট ২৮৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। এই ব্যাপারে রেলমন্ত্রক যে জবাব দিয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্তুষ্ট হয়নি ক্যাগ। গত ৩ জুলাই রেলমন্ত্রক জানিয়েছিল, সিটি মাস্টার প্ল্যান অনুসারে ওইসব জমির ‘রেসিডেনসিয়াল’ ব্যবহারই অনুমোদিত ছিল। ফলে সেইমতোই জমির মূল্যায়ন করে দর ঠিক করা হয়েছে। যদিও এই জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্যাগ জানিয়েছে, ‘কমার্শিয়াল’ উদ্দেশ্যে জমির যে বিস্তীর্ণ অংশ ব্যবহৃত হত, তারও দর নেওয়া হয়েছে ‘রেসিডেনসিয়াল’ রেট অনুসারেই। 

    রেলের বিভিন্ন অব্যবহৃত জমিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরেই করছে মন্ত্রক। তার আওতাধীন আরএলডিএ’ই প্রধানত এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ক্যাগ জানিয়েছে, দিল্লির জমিতে প্রতি বর্গমিটারে সরকার অনুমোদিত কমার্শিয়াল সার্কেল রেটের পরিমাণ ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪০ টাকা। অথচ নেওয়া হয়েছে প্রতি বর্গমিটারে মাত্র ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৮০ টাকা। কানপুরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৯৯ হাজার টাকার পরিবর্তে নেওয়া হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা বর্গমিটার পিছু। বেরিলিতে প্রতি বর্গমিটারে ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা নিতে হত। কিন্তু নেওয়া হয়েছে প্রতি বর্গমিটারে মাত্র ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। যে টাকা নেওয়া হয়েছে, তার প্রতিটিই প্রতি বর্গমিটারে সরকার নির্ধারিত ‘রেসিডেনসিয়াল’ রেট।
  • Link to this news (বর্তমান)