• কেন্দ্রের নিয়মের গেরোয় বাংলায় ২ লক্ষের বার্ধক্য ভাতায় কোপের আশঙ্কা
    বর্তমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের (এনএসএপি) আওতাধীন বার্ধক্য ভাতা প্রাপকদের ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট (ডিএলসি) প্রদানের কাজ চলছে গত আট মাস ধরে। কেন্দ্রের নির্দেশে ডিএলসি দেওয়ার আগে নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করে উপভোক্তাদের বায়োমেট্রিক ছাপ নেওয়া হচ্ছে এবং রেটিনা স্ক্যান করা হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বার্ধক্যজনিত কারণে রাজ্যের বহু উপভোক্তার বায়োমেট্রিক যাচাই সম্ভবই হচ্ছে না। ফলে তাঁদের ডিএলসি দেওয়া হচ্ছে না। এমন উপভোক্তার সংখ্যা কম নয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রায় দু’লক্ষ উপভোক্তার রেটিনা স্ক্যান করে ডিএলসি দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রবীণদের বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে সমস্যা হবে জেনেও ডিএলসি প্রদানের কোনও বিকল্প পথ খোলা রাখেনি কেন্দ্র। ফলে এই বিপুল সংখ্যক উপভোক্তার ন্যায্য প্রাপ্য কেন্দ্রের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দানা বাঁধছে প্রশাসনিক মহলে। 

    বাংলায় ‘জয় বাংলা’ প্রকল্পের অধীনে বৃদ্ধ, বিধবা ও বিশেষভাবে সক্ষম এক কোটির বেশি উপভোক্তাকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এর মধ্যে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্প এনএসএপির  অধীনে বার্ধক্য ভাতা প্রাপকের সংখ্যা ২০ লক্ষ ৪৮ হাজার। 

    ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে থাকা প্রবীণ উপভোক্তারা প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে পান। তার মধ্যে মাত্র  ৩০০ টাকা দেয় কেন্দ্র। বাকি ৭০০ টাকা দিতে হয় রাজ্যকে। ৮০ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ অর্থ দেয় রাজ্য। রাজ্যের তুলনায় অনেক কম অর্থ দিলেও চলতি বছরে ডিএলসি জমা নেওয়ার নতুন নিয়ম চালু করেছে কেন্দ্র। 

    সূত্রের খবর, মুলত রাজ্যের দু’টি দফতরের মাধ্যমে রূপায়িত হয় এনএসএপি প্রকল্প। গ্রামীণ এলাকার ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে ভাতা প্রদান এবং ডিএলসি নেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। শহর এলাকায় এই কাজ করছে পুর দপ্তরের অধীনস্ত স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা)। জানা গিয়েছে, গ্রামীণ এলাকায় ৮৭ শতাংশ উপভোক্তার ডিএলসি নেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, বায়োমেট্রিক ছাপ নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় দু’লক্ষেরও বেশি প্রবীণ উপভোক্তাকে লাইফ সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব হয়নি। সুডাও জোর কদমে এই কাজ চালাচ্ছে। শহর এলাকায়ও বহু উপভোক্তা একই সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ভাতা পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় থাকা উপভোক্তার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ আমলারা।

    কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে প্রবীণদের? রাজ্যের এক আধিকারিক জানান, রেটিনা স্ক্যান করার সময় টানা বেশ কিছুক্ষণ চোখের  পাতা খুলে রাখতে হয়। এটাই সম্ভব হচ্ছে না অনেক বয়স্ক উপভোক্তার ক্ষেত্রে। কাজের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা মানবিক কারণেই তাঁদের জোর করতে পারছেন না। কারণ, বিষয়টি তাঁদের কাছে রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে। এখানেই রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, এই প্রকল্প তো বয়স্ক মানুষদের জন্যই। তাই একটি বিকল্প বন্দোবস্ত রাখা উচিত ছিল। এই অবস্থায় যাঁদের ডিএলসি সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের অন্যান্য নথি সহ একটি তালিকা তৈরি রাখা হচ্ছে। জেলাস্তরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এই উপভোক্তাদের টাকা যাতে কেন্দ্র হঠাৎ করে দেওয়া বন্ধ না করে 

    দিতে পারে, তাই এই তালিকা 

    দিল্লি পাঠিয়ে রাখার চিন্তাভাবনাও করছে রাজ্য।   
  • Link to this news (বর্তমান)