নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও সংবাদদাতা, বনগাঁ: নাগরিকত্ব ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে ক্ষুব্ধ মতুয়াগড় বনগাঁ। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিয়ে কেন ‘রাজনীতি’ চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। তাদের দাবি, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মতুয়াদের। যাঁরা ভোট দিয়ে জিতিয়েছিল, এখন তাঁদেরই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে গেরুয়া পার্টি। মুখে ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও, আক্ষেপ যে রয়েই যাচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের বিজেপি প্রভাবিত মতুয়ারা। তাঁরা বলছেন, বাংলায় বিজেপির বড় ভোট ব্যাংক মতুয়ারা। কিন্তু তাদের জন্য কিছুই বললেন না প্রধানমন্ত্রী। আক্ষেপ আছে এটা সত্যি! এই আক্ষেপ দ্রুত ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে, উপলব্ধি করে আসরে নেমে পড়েছেন মতুয়া জনগোষ্ঠীর পদ্মনেতারা।
ঢাকঢোল পিটিয়ে ঠাকুরনগর ঠাকুর বাড়িতে সিএএ ক্যাম্প করেছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। পরবর্তীতে তাঁর দাদা সুব্রত ঠাকুরও আলাদা ক্যাম্প শুরু করেন। দুই ভাইয়ের আলাদা ক্যাম্প চলেছিল প্রায় দেড় মাস। এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই এদেশের নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটের আশায় প্রতিদিন ঠাকুর বাড়িতে ভিড় করতেন মতুয়ারা। আশায় বুক বেঁধেছিলেন মতুয়ারা। কিন্তু খসড়া তালিকায় বনগাঁ মহকুমা ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন ভোটারদের শুনানিতে হাজির হতে হবে। এর মধ্যে মতুয়াদের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার। প্রধানমন্ত্রী বাংলা ছেড়ে যাওয়ার পর, মতুয়াদের একটা বড় অংশ এখন ঠাকুর বাড়ির ক্যাম্প নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
জানা গিয়েছে, শান্তনু ঠাকুরের ক্যাম্পে নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছেন ২০ হাজার মতুয়া। সুব্রত ঠাকুরের ক্যাম্পে ১৫ হাজার। প্রত্যেককে দিতে হয়েছে কমবেশি এক হাজার টাকা করে। এখনও পর্যন্ত কতজন মতুয়া সিএএ সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন, সংখ্যাটা জানা নেই কারও। এনিয়ে গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী কেন কিছু বলেননি, সেটা আমার জানা নেই। তবে, এটুকু বলতে পারি কোনও মতুয়ার নাম বাদ যাবে না। এদিকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, বিজেপি যে মতুয়াদের নিয়ে ছেলেখেলা করছে, তা ফের প্রমাণিত হল। মতুয়াদের নাম বাদ দিয়ে দেওয়াই যে বিজেপির মূল উদ্দেশ্য, মোদির বাংলা সফরে তা স্পষ্ট। মতুয়াগড়ে এসেও নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও কথা বললেন না প্রধানমন্ত্রী। যে মতুয়ারা ভোট দিয়ে শান্তনু ঠাকুরকে কেন্দ্রের মন্ত্রী করল, সুব্রত ঠাকুরকে বিধায়ক করল, তারা বুঝক। সিএএর নামে টাকা তোলায় ছিল বিজেপির লক্ষ্য।
এদিকে, মতুয়াদের ‘ধোঁকা’ দেওয়া হয়েছে এই দাবি তুলে শনিবার বাগদার হেলেঞ্চাতে পড়ল পোস্টার। তাতে লেখা ‘মতুয়াদের কেন ধোঁকা দিলে? মতুয়া অধিকার দমন ইচ্ছাকৃতভাবে। ছাব্বিশে মতুয়ারা বিজেপিকে দেখে নেবে।’ এনিয়ে বিজেপি প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দ্রনাথ গাইন বলেন, এটা নির্দিষ্ট একটি দল রাজনৈতিক স্বার্থে করেছে। মতুয়ারা কেন্দ্র সরকারের জন্যই নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। এনিয়ে বনগাঁ সংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, বিজেপি মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এটা যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ। ২৬ শে মতুয়ারা জবাব দেবেন।