বিএড ও ডিএলএড কলেজ বন্ধের ভুয়ো আর্জিতে জেরবার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা
বর্তমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: ‘আমার কলেজে পরিকাঠামো তেমন নেই। ছাত্রছাত্রীও হয় না। তাই আমাদের বিএড (অনেক ক্ষেত্রে ডিএলএড) কলেজটা তুলে দিতে চাইছি,’ এমন বয়ানে লেখা দিস্তা দিস্তা চিঠি যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষক শিক্ষণ নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই’র কাছে। কেউ আবার নিজের অনুমোদিত কলেজেই পরিকাঠামো এবং শিক্ষকদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এনসিটিই’র পরিদর্শন চাইছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থাটি অবাক কলেজগুলির এমন ‘সৎ’ স্বীকারোক্তিতে। কিছু ক্ষেত্রে নাকি এনসিটিই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু একটি খটকা থেকেই যায়। তা থেকেই কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করে এনসিটিই জানতে পারে চিঠিগুলি আসলে ভুয়ো।
এখন এনসিটিই’র রিজিওনাল অফিসগুলি দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তার দপ্তরেই যাচ্ছে চিঠিগুলি। সম্প্রতি এনসিটিই সূত্রে এমন তথ্য জানতে পেরে অবাক হয়ে গিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের স্বামী বিবেকানন্দ কলেজ অব এডুকেশনের সেক্রেটারি মহম্মদ বসিরুদ্দিন। বেসরকারি কলেজগুলির সংগঠনের নেতা তিনি। তাঁর নাম করেই চিঠি গিয়েছে এনসিটিই’র কাছে। দিল্লি সূত্রে সেই চিঠির খামের ছবি এসেছে তাঁর কাছে। তাতে দেখা গিয়েছে, চিঠিতে সেক্রেটারির নাম মহম্মদ বসির উল্লেখ করে তাঁরই কলেজের নামে লেখা হয়েছে চিঠিটি। বসিরুদ্দিন বলেন, ‘আমার পুরো নাম মহম্মদ বসিরুদ্দিন। এদিকে চিঠিতে লেখা মহম্মদ বসির। ইংরেজিতে আমার নামের বানানে ‘এইচ’ ব্যবহার করি না। সেই চিঠিতে তা রয়েছে। প্রেরক বোধহয় সেগুলি জানতেন না।’ অন্তত ৫০টি কলেজের তরফে এই চিঠি যাওয়ার খবর এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন কর্ণধাররা।
সূত্রের খবর, কলেজ সংগঠনে নানা লবির গণ্ডগোলের ফসল এই কাণ্ড। অন্য লবির কেউ চিঠি পাঠাচ্ছেন বলে সন্দেহ করছেন কলেজ মালিকরা। এই সমস্যার সমাধান কি? এক যোগে এনসিটিই’কে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে, কলেজ থেকে কোনও চিঠি পাঠানো হলে যেন আগে সরাসরি যোগাযোগ করে নেওয়া হয় কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে। তারপর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতেও অবশ্য আশঙ্কা কাটছে না বিভিন্ন কলেজ মালিকদের। হুগলির একটি বিএড ও ডিএলএড কলেজের কর্ণধার বলেন, ‘কী কাণ্ড বলুন তো! ভুয়ো চিঠির ভিত্তিতে এনসিটিই যদি কোনও পদক্ষেপ করে বসত, তাহলে অন্তত ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।’
এমনিতেই কলেজের অনুমোদন সংক্রান্ত যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যে। সাম্প্রতিককালে বহু বিএড এবং ডিএলএড কলেজ অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু কলেজ পুরোপুরি বন্ধও হয়েছে। এখন ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’র মতো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ভুয়ো চিঠি। যদিও এনসিটিই’র এক আধিকারিক জানান, চিঠি আসল না ভুয়ো, তা খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ নিয়ে কলেজগুলির চিন্তার কিছু নেই।