• নাগরিকত্ব নিয়ে মুখে কুলুপ মোদির, মতুয়াদের জন্য শুধুই ‘জয় নিতাই’! হতাশ বঙ্গ বিজেপিও
    বর্তমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, তাহেরপুর: ফোনে মাত্র ১৫ মিনিটের ভাষণ। তাতেই অন্তরে লালিত প্রত্যাশা পরিণত হল হতাশায়! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এলেই পূরণ হবে যাবতীয় প্রত্যাশা, মিলবে ভারতীয় নাগরিকত্ব, নাম উঠবে ভোটার তালিকায়—গত কয়েকমাস ধরে যে ঢাক বাজাচ্ছিল বঙ্গ বিজেপি, তা ফেটে গেল! আশাভঙ্গ হল মতুয়াদেরও। কলকাতা বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে যে ভাষণ তাহেরপুরের জমায়েতকে শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তাতে এসআইআর পর্বে মতুয়াদের আতঙ্ক কমানোর কোনও নিদান ছিল না। বরং ভোটার তালিকায় নাম ওঠার সম্ভাবনা আরও কমে যাওয়ায় ওই জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি চরম বিড়ম্বনায় পদ্মপার্টির বাংলা টিমও। শনিবার ভোর থেকে প্রত্যাশার ঝাঁপি নিয়ে বসে থাকা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ কেবল শুনলেন প্রধানমন্ত্রী উচ্চারিত—‘জয় নিতাই’, ‘জয় হরিচাঁদ ঠাকুর’, ‘জয় গুরুচাঁদ ঠাকুর’ এবং ‘জয় বড়মা’! নাগরিকত্ব নিয়ে একটি শব্দও সেই ভাষণে ছিল না। 

    প্রধানমন্ত্রী সফর ঘিরে কোমর বেঁধে নেমেছিল পদ্মপার্টির ছোট, মেজ আর বড় কর্তারা। খসড়া তালিকায় নাম বাদ যাওয়া লক্ষ লক্ষ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে বারবার শোনানো হচ্ছিল আশ্বাসবাণী, ‘চিন্তা নেই, সব মিলবে।’ প্রত্যাশায় জল ঢেলে প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ামাত্রই মতুয়া প্রতিনিধিদের ক্ষোভের সম্মুখীন হতে হয় বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেডকে। এরপরই ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত ওই জনগোষ্ঠীর ‘ক্ষোভ ক্ষতে’ প্রলেপ দিতে আসরে নামেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ‘এক্স’ হ্যান্ডলে মোদি লেখেন, ‘আমি প্রত্যেকটি মতুয়া ও নমঃশূদ্র পরিবারকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা সর্বদা তাঁদের সেবা করব। তাঁরা তৃণমূলের অনুগ্রহে এখানে নেই। আমাদের সরকারের প্রণয়ন করা সিএএ-র সৌজন্যে তাঁরা সম্মানের সঙ্গে ভারতে বসবাস করার অধিকার পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গঠিত হলে মতুয়া ও নমঃশূদ্র সমাজের জন্য আমরা আরও বেশি করে কাজ করব।’ প্রধানমন্ত্রী এহেন প্রতিশ্রুতিকে ফের ভোটের জন্য ‘গাজর ঝোলানো’ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নাগরিকত্ব আর ভোটার হওয়ার পথ সুগম হওয়ার কোনও বার্তা এক্স-হ্যান্ডলে না থাকায়, ক্ষোভ আরও বেড়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের সিংহভাগ গোঁসাই, পাগল ও দলপতিদের।  

    খারাপ আবহাওয়ার জন্য এদিন প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার ল্যান্ড করতে পারেনি তাহেরপুরে। কলকাতা বিমানবন্দরেই ফিরে যান তিনি। বিকল্প হিসেবে মোদি বেছে নেন ভার্চুয়াল ভাষণ। কিন্তু তাও কিছুক্ষণের মধ্যে প্রযুক্তিগত সমস্যায় বিগড়ে যায়। বেলা ১টা নাগাদ টেলিফোনেই ভাষণ দেওয়া শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলায় ‘মহা জঙ্গলরাজ’ চলছে বলে অভিযোগ করার পাশাপাশি কীভাবে ‘দক্ষ সরকার’ চলছে বিহার ও ত্রিপুরায়, তারও বিবরণ দেন। রাজ্যের ২ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়ার বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও তিনি জানান, তাঁরা ক্ষমতায় এলে বাংলার জন্য অর্থ ও প্রকল্পের কোনও অভাব হবে না। সব শুনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে বাড়ি ফিরে যান মোদি-ভক্তরা। তবে মতুয়ারা ফিরেছেন থমথমে মুখে, শূন্য হাতে।  
  • Link to this news (বর্তমান)