• দুয়োরানি গুড়গুড়িপাল ইকো পার্ক, মরশুমে মুখ ফিরিয়েছেন পর্যটকরা
    এই সময় | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    একটা সময়ে পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য ছিল এই জায়গা। শান্ত পরিবেশে নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটানো, বনভোজনের জন্য শীত পড়লেই এখানে ভিড় করতেন আশেপাশের বাসিন্দারা। এমনকী দূরের জেলাগুলি থেকেও আসতেন অনেকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই ছবিটা একেবারেই বদলে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপালে।

    ঝোঁপ-জঙ্গলে ভরে গিয়েছে গোটা এলাকা। চারিদিকে অযত্ন আর অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। গুড়গুড়ি পাল ইকোপার্ক এখন আর বোঝা যায় না। মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে শাল-সোনাঝুরি ঢাকা এই বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করেই তৈরি করা হয়েছিল গুড়গুড়িপাল ইকো পার্ক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০০৮–এর শেষের দিকে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদী কার্যকলাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। তারই প্রভাব পড়ে গুড়গুড়িপাল ইকো পার্কে।

    মাওবাদী আতঙ্কে ধীরে ধীরে কমতে থাকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। একসময়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে পার্কটি। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এখন জলাশয়ে নামার সিঁড়ি, বসার জায়গা ও পিকনিকের জন্য করা বসার শেডগুলি ভেঙে পড়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আজও সেই রকমই রয়েছে। বিস্তীর্ণ জলাভূমি, সারি সারি শাল, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি, নিম, খেজুর ও ডুমুর গাছের জঙ্গল রয়েছে।

    সবুজের মাঝে প্রজাপতি, মৌমাছি, ফড়িং ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা। অদ্ভুত এক প্রাকৃতিক মায়া ছড়িয়ে রয়েছে এখানে। আবার এখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হাতিদের আনাগোনা। গত কয়েক বছর ধরে হাতিদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে এখানে।

    মেদিনীপুর ডিভিশনের ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘অনেক পুরোনো পার্ক বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন এই অঞ্চলে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে পার্ক চালু করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা করা হবে।’

    স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘একসময়ে পর্যটকদের ভিড়ে এই এলাকা ছিল মুখরিত। ছোটখাটো দোকান খুলে অনেক পরিবার রোজগারের পথ পেয়েছিল।’ অন্য দিকে, অরিন্দম দাস, সুলেখা বেরা, সুপ্রিয়া মিশ্র–সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মত, ‘এই পার্কে গেলে আজও মন ভালো হয়ে যায়। বন দপ্তর যদি পরিকল্পিত ভাবে পার্ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, তা হলে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। পাশাপাশি স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’

    বন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘পার্ক চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে পার্ক চালু করা সহজ নয়।’ জানা গিয়েছে, জেলায় গোপগড় ইকো পার্ক-সহ অন্য পার্কেও কর্মী সঙ্কট চলছে এবং অস্থায়ী কর্মীদের দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মোড়া গুড়গুড়িপাল আজও তার আকর্ষণ হারায়নি।

  • Link to this news (এই সময়)