• বালি পাচার আটকে আক্রান্ত অফিসাররা, মারধরের অভিযোগ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে
    এই সময় | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, কোচবিহার: পাচারে বাধা পেয়ে ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের মারধরের অভিযোগ উঠল বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। সরকারি গাড়ি ভাঙচুর, আধিকারিকের হাত থেকে সরকারি রেজিস্টার ছিনিয়ে নেওয়া-সহ একের পর এক অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারের মাথাভাঙায়। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই ভূমি সংস্কার আধিকারিক। মাথাভাঙা-১ ব্লকের ভূমি সংস্কার আধিকারিক রাজা দাশগুপ্ত ঘোকসাডাঙা থানায় আট জন বালি মাফিয়ার নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

    বালি মাফিয়াদের হামলা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাতে পারে। শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ মাথাভাঙা শহর সংলগ্ন পঞ্চানন মোড় এলাকায় রুটিন তল্লাশির কাজ করছিল সেখানকার ভূমি সংস্কার দপ্তরের একটি দল। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সেই রাস্তা দিয়ে একের পর এক ডাম্পার বালি বোঝাই করে যেতে দেখা যায়। বিষয়টি নজরে আসতেই ভূমি সংস্কার দপ্তরের দল গাড়িগুলিকে আটকানোর চেষ্টা করে। তবে একটি ডাম্পার না দাঁড়িয়ে দ্রুত গতিতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

    তৎক্ষণাৎ সেই ডাম্পারের পিছু ধাওয়া করেন ভূমি সংস্কার দপ্তরের ইনস্পেক্টর সত্যচন্দ্র দাস ও দেবাশিস বর্মন। ডাম্পার মাথাভাঙার মানসাই নদী পেরিয়ে কোচবিহার-মাথাভাঙা সড়কের দোলং মোড় এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাসের জন্য ডাম্পারের গতি কমতেই ভূমি সংস্কার দপ্তরের গাড়ি সেটির নাগাল পেয়ে যায়।

    এর পরে ডাম্পারে থাকা বালির চালান ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখতে চাইলে গাড়িতে থাকা লোকজন কোনও বৈধ নথি আধিকারিকদের দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ।

    হাতেনাতে পাকড়াও হয়ে যাওয়ায় প্রত্যাঘাতের পথ নেন ডাম্পারে থাকা চালক, খালাসি-সহ অন্যরা। সাত-আট জন মিলে আধিকারিকদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁদের ঘিরে ধরে মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে পঞ্চানন মোড়ে থাকা ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক রাজা দাশগুপ্ত দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

    তাঁর দাবি, 'সেখানে পৌঁছে আমি দেখি, দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টরকে ঘিরে মারধর করা হচ্ছে। আমি গাড়ি থেকে নামতেই দুষ্কৃতীরা পাথর ছুড়ে আমার গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেয়। রড দিয়ে গাড়িতে ভাঙচুর করে। আমার হাতে থাকা চালান কাটার ডুপ্লিকেট কার্বন কপি ছিনিয়ে নেয়।' ঘটনাস্থল থেকেই তিনি মাথাভাঙার এসডিপিও-কে ফোন করেন রাজা। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথাভাঙা ও ঘোকসাডাঙা থানা এবং নিশিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে পুলিশের তিনটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তবে পুলিশ আসার আগেই ডাম্পার নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

    রাজার দাবি, ঘটনাস্থলে থাকা দুষ্কৃতীদের মধ্যে তিন জনকে তিনি চিনতে পেরেছেন। তাঁরা হলেন ঘোকসাডাঙার পরিচিত বালি মাফিয়া সুমন বর্মন, মনা সরকার ও রত্নেশ্বর বর্মন। এদের সঙ্গে আরও পাঁচ জন ছিলেন। অভিযোগ, এই ত্রিমূর্তি অতীতেও অবৈধ বালি তোলা ও পাচারে যুক্ত ছিলেন। এ দিনের পুরো ঘটনা জানিয়ে ঘোকসাডাঙা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূমি সংস্কার আধিকারিক। মারধরে আহত দুই আধিকারিককে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার তন্ময় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পাঠিয়ে আধিকারিকদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)