অয়ন শর্মা: ভোটার তালিকায় নাম বিভ্রাট। তা মেটাতেই ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে মেগা শুনানি, নোটিশ যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি।
পশ্চিমবঙ্গের খসড়া ভোটার তালিকা বা SIR (Special Intensive Report) প্রকাশের পর রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রায় ৫৮ লক্ষ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেক জীবিত ভোটারের নাম ‘মৃত’ তালিকায় ওঠা বা তথ্যে অসঙ্গতি থাকার মতো গুরুতর অভিযোগও সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতির সমাধানে এবার শুরু হচ্ছে ‘SIR’-এর দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ গণ-শুনানি বা হিয়ারিং পর্ব। দেশের বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে সময়ে শেষ হয়েছে SIR। বাকি রাজ্যগুলি বাড়তি সময় চেয়েছে। অর্থাৎ কমিশন BLO দের মাধ্যমে গোটা প্রক্রিয়া সঠিক সময় দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এত বড় মাপের কাজে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ত্রুটি থেকে গেছে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর আজ থেকে শুনানি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি হিয়ারিং লেটার পাঠানোর কাজ শুরু হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুনানির সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত হিয়ারিং চলবে।
খসড়া তালিকায় কারও নাম বাদ পড়ে থাকলে সেই ব্যক্তিকে নতুন ভাবে নাম তোলার জন্য ফর্ম ৬ ফিলাপ করে জমা দিতে হবে। কোথায় জমা দেবেন সে ব্যাপারে BLO রা সহযোগিতা করবেন। প্রয়োজনে তাদের হিয়ারিংয়ে ডাকা হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও যদি কারুর কোনো অসন্তোষ থাকে তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করতে পারেন। তাতেও ফল না পেলে তিনি সরাসরি CEO দফতরে লিখিত আবেদন করতে পারেন। BLO-রা আজ থেকে বুথে বুথে বসছেন। নাম বাদ পড়া ভুল নাম বয়স ঠিকানা বুথ নম্বর পার্ট নম্বর নিয়ে কোনো ভোটারের কোনো অভিযোগ থাকলে বুথ থেকেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
২৬ ডিসেম্বর থেকে শুনানি, বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে নোটিশ
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, আগামী ২৬ বা ২৭ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে হিয়ারিং পর্ব শুরু হতে পারে। যদিও চূড়ান্ত নির্দেশের জন্য দিল্লির সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করা হচ্ছে। প্রথমে বৃহস্পতিবার থেকে নোটিশ পাঠানোর কথা থাকলেও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার থেকে ভোটারদের নোটিশ পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। ইংরেজি নোটিশ বুঝতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হতে পারে ভেবে সেগুলিকে আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। আগামী ২২ বা ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নোটিশ পাঠানোর কাজ শেষ করে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি প্রক্রিয়া চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
কারা ডাক পাবেন শুনানিতে?
মূলত দু’টি পর্যায়ে শুনানি চলবে:
১. নো ম্যাপিং তালিকা: প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটার, যাঁরা ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সাথে নিজের যোগসূত্র প্রমাণ করতে পারেননি।
২. সন্দেহভাজন তালিকা: প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোটার, যাঁদের লিঙ্গ, বয়স বা নামে বড়সড় গরমিল রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৬৭ লক্ষ নামের ওপর কমিশনের বিশেষ নজর রয়েছে। বিএলও-রা (BLO) বাড়িতে গিয়ে নোটিশ দিয়ে আসবেন এবং প্রয়োজনে মোবাইলে মেসেজও পাঠানো হবে।
শুনানির প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত বদল
শুনানি পর্ব স্বচ্ছ রাখতে কমিশন একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে:
মাইক্রো অবজারভার: হিয়ারিংয়ের সময় প্রতিটি টেবিলে মাইক্রো অবজারভার উপস্থিত থাকবেন। তিনি সরাসরি ইআরও (ERO)-কে রিপোর্ট করবেন। তবে শুনানিতে সিসিটিভি বা ওয়েবক্যাম থাকছে না।
অনলাইন আপলোড: হিয়ারিংয়ের সমস্ত নথিপত্র অনলাইনে আপলোড করা হবে যাতে কমিশন সরাসরি নজরদারি চালাতে পারে।
এআই অ্যাপ (AI App): কমিশনের অ্যাপে ‘নট নিডেড ফর হিয়ারিং’ (Not Needed for Hearing) নামে একটি নতুন অপশন যুক্ত করা হয়েছে, যা শুনানির সময় ব্যবহার করা হবে।
পরিকাঠামো নিয়ে উদ্বেগ
বিশাল সংখ্যক মানুষের শুনানির জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলাশাসক, মহকুমা শাসক বা বিডিও অফিসে এই শুনানি হবে। প্রতিটি সেন্টারে ১১টি করে টেবিল থাকবে এবং প্রতিদিন টেবিল প্রতি ১০০ জন ভোটারের কথা শোনার পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিশাল ভিড় সামলানোর জায়গা বা সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছে।
কমিশন আরও জানিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর মাইক্রো অবজারভারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে কাজে গাফিলতির জন্য বারুইপুর পূর্ব-১ এর ইআরও (ERO) ও বিএলও-দের তলব করেছে কমিশন। অন্যদিকে, ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৬০০ জন বিএলও-কে সম্মানিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।