• অনুদানের ৮২ শতাংশই বিজেপির ঘরে
    বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক। এই ব্যবস্থাটি আসলে কুইড প্রো কুয়ো। অর্থাৎ কোনও কিছুর বিনিময়ে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। এমনই ব্যাখ্যা দিয়ে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনী বন্ড বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাতে আখেরে লাভের লাভ যে কিছুই হয়নি, তার প্রমাণ কমিশনে দাখিল করা নির্বাচনি ট্রাস্টের রিপোর্ট। কারণ, ‘বন্ড’ বদলে ‘ট্রাস্ট’ এলেও, গেরুয়া শিবিরের কোষাগারে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। বন্ডের মতোই ট্রাস্টের ‘চাঁদা’তেও ফুলে ফেঁপে উঠেছে মোদি-শাহের দলের তহবিল।

    রিপোর্ট বলছে, ইলেক্টোরাল বন্ডে সবচেয়ে বেশি লাভবান ছিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা বন্ধ হওয়ার পর আসে ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট। নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৯টি নথিভুক্ত ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মধ্যে ১৩টির অনুদান সংক্রান্ত বিবরণ রয়েছে। এদের মধ্যে মোট ৯টি ট্রাস্টের অনুদান সংক্রান্ত রিপোর্ট সামনে এসেছে। বাকি চারটি সংস্থা (জনহিত, পরিবর্তন, জয়হিন্দ ও জয়ভারত) চলতি অর্থবর্ষে কোনও টাকা দেয়নি।

    প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,  ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৯টি ট্রাস্টের অনুদানের পরিমাণ ৩ হাজার ৮১১ কোটি টাকা, যা রাজনৈতিক দলগুলির কাছে গিয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২১৮ কোটি। অর্থাৎ, এক বছরের মধ্যে অনুদান বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট। প্রায় ২ হাজার ৬৬৮ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রোগ্রেসিভ ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট। প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ ৯১৪ কোটি ৯৭ লক্ষ। রয়েছে আরও সাত সংস্থা।

    সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে নিজেদের অর্থ প্রদানের রিপোর্ট জমা দিয়েছে এই ট্রাস্টগুলি। আর তাতেই সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যাচ্ছে, মোট অনুদান অর্থাৎ ৩,৮১১ কোটি টাকার সিংহভাগই ঢুকেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির পকেটে। পরিমাণ, প্রায় ৩ হাজার ১১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। যা মোট অনুদানের ৮২ শতাংশ! বাকি ৬৯৯ কোটি টাকা গিয়েছে অন্য দলগুলির অ্যাকাউন্টে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে কংগ্রেস। তাদের ঝুলিতে ঢুকেছে মাত্র ২৯৮ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ মোট টাকার ৮ শতাংশেরও কম। তালিকায় তৃতীয় স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ১০২ কোটি টাকা। 

    পরিসংখ্যান বলছে, বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট। অর্থের পরিমাণ ২,১৮০ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। জানা গিয়েছে, এই ট্রাস্টকে অর্থ সরবরাহ করেছে জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার, মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, অরবিন্দ ফার্মা সহ একাধিক বড়ো বড়ো সংস্থা। এদের মধ্যে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কিস্তোয়ারে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে। যা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ের চাঁচাছোলা মন্তব্য, ‘পুঁজিপতিদের সাহায্য করছে বিজেপি। ওরাও বিনিময়ে দিচ্ছে। আসলে বিজেপি টাকার উপর চলে, মানুষের সমর্থনে নয়। দেশের সব সম্পদ পুঁজিপতিদের হাতে বিক্রি করে দিচ্ছে বিজেপি। এটা তার প্রতিফলন।’

    ট্রাস্টের এহেন পরিসংখ্যান সামনে আসার পর ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে পরিস্থিতির বদল হল কোথায়? সুপ্রিম নির্দেশেই বা কী লাভ হল? 
  • Link to this news (বর্তমান)